শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২

বছরের হাবি জাবি

 













এ বছর শুরু থেকে দেখলাম এতদিনে মাত্র একটা ব্লগ পোস্ট। যদিও ব্লগ কেউ পড়ে না, ফলো করেনা, নিজের ডায়রি হিসেবেই বছরের আকা ছবি গুলো আর লার্নিং পোস্ট করে রাখি।


এখন পেইন্টিং, বা ক্যারেক্টার ড্রয়িং এর এপ্রোচ অনেক বদলে গেছে। লুজ পেন্সিল স্টাইলে লাইন আর্ট, রাফ কালারে লাইট শ্যাডো ব্লক করে আস্তে ধীরে রেন্ডারিং এ যাওয়া, অনেক রকম এক্সপেরিমেন্ট করে টরে কম্ফোর্টেবল প্রসেসের জায়গা খোজা চলছে এখনো। তবে মূটা মুটি একটা ধাঁচে প্রসেস সেট করতে পারছি এখন। সাটল অনেক ফর্ম দেখি এখন, অনেক জায়গায় জানার ঘাটতি বুঝি, আবার এও বুঝি সব শেখা এক জীবনে সম্ভব না। অন্যের চোখে নিজের কাজ দেখতে পাওয়ার জায়গায় এখনো অনেক ঘাটতি-টেকনিকের পাশাপাশি মনটাকেও ঝালিয়ে নেয়া প্রয়োজন। চলছে চলবে আকাআকি-শেষ মেষ সৃষ্টিতেই তো আনন্দ।

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ফেব্রুয়ারি ২২

ফেব্রুয়ারির দুপুর ৩টা।

ঝাঁ ঝাঁ রোদের গরম।মাঝ ফেব্রুয়ারিতেই শীত পালিয়েছে। রিকশাটা এসে থামে টি এস সি র মোড়ে। বিকাশের দোতলা বই এর সমান গেটের পাশে পুলিশ ব্যারিকেড টা পার হতেই দু একজন হাতে রঙ তুলি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাবার আয়োজন করে। বাংলা একাডেমির রাস্তা টা বরাবর অনেক দূর দেখা যায় মানুষের সারি। মুচ মুচে প্যাটিস এর ঘ্রান টা নাকে আসে-মেলার গেট ঐ যে সামনে।

এপার বাংলা না ওপার বাংলা-সোহরাওয়ার্দি আর বাংলা একাডেমির মাঝের রোড ডিভাইডার টায় দাঁড়িয়ে কতক্ষন এদিক সেদিক তাকাই। আজ কি স্কেচ এর দলের কেউ আসবে? বস কি মেলায় নাকি আজকে আসবেন না? পরিচিত কাউকে ডাকব নাকি এক দফা ঘুরে আসব আগে?

বই মেলাই তো-মিলে যাবে কেউ না কেউ। সিকিউরিটি ঢোকার আগেই ব্যাগটার চেন আধ খোলা করে রাখি-পুলিশ বুঝে যায় মেলা বার এপার ওপার করা পাবলিক-হাত নেড়ে ছেড়ে দেয়।

প্রতিবার মেলায় ঢুকে দোকান পাট চিনতে সপ্তাহ খানেক কেটে যায়। ডান দিক বরাবর হাটতে থাকি-মেলাটা এবার কতদূর গেল? স্বাধীনতা স্তম্ভের ওপারেও চলে গেছে? ফুচকা আর খাবার এর দোকান এর জায়গা বাড়িয়ে দিল নাকি এবার? বড় বড়ো প্যাভিলিয়ন গুলো তো সব এক জায়গাতেই মনে হয়। কথাপ্রকাশ, পাঞ্জেরি, অন্যপ্রকাশ, আগামী, সময়, কাকলী, বাতিঘর ( চট্টগ্রাম ), প্রথমা-আরো অনেক গুলি বড় প্যাভিলিয়নে ঢু মেরে দেখে নেই। এখানে কেনা হবে-তবে আর একটু দেখে শুনে। যাওয়ার পথে নাম পড়তে পড়তে যাওয়া-পিছে টাঙ্গানো ব্যানারে নতুন বই এর নাম আর লেখকের ছবি ঝুলছে-বেশ এবার মাঝের সারিগুলিতে যাওয়া যাক।

কয় একটা দোকান থাকবে যেখানে সেলিব্রেটি লেখকের আনা গোনা-সামনে অটোগ্রাফ নিতে তুমুল ভিড়। কোন কোন দোকান মুখ চেনা কোন লেখকের বই বের করে ভক্তকূল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। রোদের তেজে একটু ছায়ার জন্য দোকানের সামনে টাঙ্গানো চাদর এর নিচে দিয়ে হেটে যেতে যেতে বই এর নাম দেখা হবে-হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখা হবে-কোন কভারে চোখ আটকে গেলে উলটে দেখে নিব কে আকল ছবিটা-ওহ এ যে আমাদের চেনা আরাফাত।

দুপুরের মেলায় হুট করে দেখা হয়ে যাবে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরায় ইকবাল ভাই। পালাই পালাই করেও হঠাৎ চোখে পড়ে যাব আর ক্যামেরার সামনে দু লাইন কথা বলতে হবে। আবার কথা হবে এই আশ্বাস দিয়ে দৌড়ে পালাব বই এর জটলার ভেতর।

এক চক্কর কেটে ফিরতি পথে দু একটা চেনা দোকানে আবার বই দেখা দেখি। হঠাৎ করে চোখে পড়ে যাবে নাম না জানা কোন প্রকাশনীর টেবিলে উপর থেকে দু নম্বর সারিতে ধ্রুব এষ এর না পড়া একটা থ্রিলার, খুজতে থাকা কোন বই এর দারুন কোন অনুবাদ, হরর বা ফ্যান্টাসি ধাঁচের ছোট গল্পের কোন একটা কালেকশন-কিংবা নতুন আসা কোন কমিক। বিকাশে পেমেন্ট করে ১০% লাভ আর এক প্যাকেট বই বগলদাবা করে হাটা চলবে। এর মধ্যে হয়ত জুটে গেছে সাথে দু চারজন পরিচিত কেউ- মেলার ধুলোর আধিক্য আর বেঞ্চের স্বল্পতার আলাপ করতে করতে মাহাতাব এর ফোন। মেলাতেই তো-আস। কিছু বই এর নাম দাও-চাইনিজ সাইফাই? রাশিয়ান নভেলা? ফ্যান্টাসি ট্রিলজি? যা পাই তাই খাই-বই মেলার সময় এত বাছলে চলে না।

ঘুরতে ঘুরতে বাতিঘরের সামনে এসে পড়ব। বই দেখার সময় নেই-উপচে পড়া ভিড়। সিদ্দিক ভাই এর বই আসল নাকি নতুন? প্যাকেট প্যাকেট-বিকাশ হবে না-কোনঠাসা ভিড়ে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিয়ে কোনমতে বের হয়ে এসে দেখব সাথে মাহাতাব হাওয়া। বাতিঘরের আড্ডায় তাকে রেখে সামনে হাটতেই দেখব বস এসেছেন মেলায়। বস এর সাথে নিশ্চিত ভাবে থাকবেন কোন প্রকাশক-হালকা কথা বলে তারপর বসের পিছে হাটতে হাটতে আমরা চলে যাব আশ পাশের দোকানে। শিশু চত্ত্বরে এসে পড়লাম নাকি?

চিলড্রেন বুক দেখা চলবে-কে আকল কোথায়? কেমন আকল? নতুন বই এর প্রোডাকশন কেমন? তীর্থ ভাই কি আকল মেলার গেটে? নাহ, লোকটারে থামাতে হবে-এসব আক্ষেপ শেষে ঢাকা কমিক্স। মেহেদি ভাই ক্যাশে-গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে জোড়াতালি দিয়ে বসে পড়ি। সেল কেমন-দোকানের পজিশন কেমন-নতুন বই কি আসল দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ভাই ব্যাগটা রেখে যাই দোকানে? চলেন ঘুরে আসি।

ঘুরে আসার নাম করে মেহেদি ভাই কে নিয়ে মূলত যাওয়া হবে কোনার খাবার দোকানে। কফি-প্যাটিস-ফুচকা-চলবে একটা কিছু। ফিরতি পথে মেহেদি ভাই এর সাথে এক দফা মেলা ঘুরা ঘুরি-ততক্ষনে দলে ভারি হয়েছি আমরা। লেকের ধারের দোকান গুলির পাশ ধরে হেটে ফিরছি শিশু চত্তরের দিকে। কানে আসছে ঘোষনা চলছে মাইকে-আজ মেলায় প্রকাশিত হয়েছে অমুক-পাওয়া যাচ্ছে তমুক প্রকাশনির স্টলে। ভাই উন্মাদের দিকে যাবেন নাকি? নটা বাজতে কত দেরী? পৌনে নটার পর কিন্তু এদিকে আর আসা যাবে না-হিসেব কষে যাওয়া হবে ওপার বাংলায়। উন্মাদ স্টলে নতুন আর এক আড্ডা-বিপনু ভাই, পাবাল, তানজিম এবং আনকোরা নতুন আরো কিছু মুখ। দেখা মিলতে পারে রোমেন ভাই এর সাথে-তাহলে পাশের বাংলা একাডেমি ক্যান্টিনে আর এক দফা ফ্রি নাস্তা। খেয়ে দেয়ে জলদি ফিরতে হবে-স্টলের হিসেব, বন্ধের সময়।

মেলার শেষ প্রহর চলছে। বাতি নিভে গেছে-স্টলের পর্দা পড়ে গেছে। পকেটে হাত ভরে চেনা গল্প গুলি করতে করতে ফিরছি মেলার গেটের দিকে। পাশে পুলিশ ফাড়ি-তথ্য কেন্দ্র-সারি সারি ল্যাম্পোস্টের শাদা আলো। ব্যাগে ভর্তি বই। হাটছি আমি, সামনে মেহেদি ভাই কমিক নিয়ে কিছু বোঝাচ্ছেন আর কাউকে। রোড ডিভাইডারের ওপারে বস। হেঁটে হেঁটে টি এস সির গেট। সেখান থেকে একদল যাবে শাহবাগ-বস ফিরবেন গাড়িতে মিরপুর-আর আমি টি এস সি-আজিমপুর রিকশা না পেয়ে একলা হাটা দেব ঢাকা ভার্সিটির ভেতর দিয়ে। কালকে আবার একই সময়, একই জায়গা, একই রুটিনে।

আমাকে কেউ নিয়ে যাবে মেলায়?