বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৯

ক্যারিকেচার-২৫

ক্যারিকেচার-শুরু ক্যারিকেচার দিয়ে-এখনো সেইরকম ই মজা পাই ক্যারিকেচার এঁকে! নতুন কিছু কমার্শীয়াল কাজ-নিজের কাজ ক্যারিকেচার নিয়ে ব্লগে দিয়ে রাখি।









নতুন কমিক-ষড়রিপু

নতুন একটা গল্প নিয়ে কমিকের কাজ করছি ইদানিং। গল্পের মূল ভাবনা লেখা ফরহাদ মহসিন এর। সেটার উপরে একটা কমিক ওয়ার্ল্ড তৈরী করে লং একটা স্টোরি বলার ইচ্ছা। বড় গল্প কমিকে বা গ্রাফিক নভেলে কিভাবে বলা যায় এটা নিয়ে ইদানিং ভাবছি। বড় একটা আর্ক সাজিয়ে নিয়েছি। এখন ক্যারেক্টার গুলিকে নিয়ে সেই আর্কের শেষ মাথায় যাবার পথ টা তৈরী করতে করতে গল্প আগানোর প্ল্যান। বড় গল্পে খুব এসেনশিয়াল অনেক ক্যারেক্টার এবং তাদের ছোট ছোট আর্ক এবং ডেভেলপমেন্ট। এই প্রিন্সিপাল টা ম্যাংগা পড়তে পড়তে শেখা। দেখা যাক কতদূর কি অ্যাপ্লাই করতে পারি।

প্রথম কিছু স্ট্রিপের কাজ হয়েছে। সেটা ব্লগে দিয়ে রাখি।










রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯

ড্রয়িং এর প্রবলেম

ক্যারেক্টার ড্রয়িং নিয়ে প্রাকটিস পড়াশুনা এসবের অনেক খানি জায়গা জুড়েই দেখা গেছে ভাবছি টেকনিক নিয়ে। টুল নিয়ে। লাইন দিব নাকী আউটলাইন ছাড়া আকব, ফ্ল্যাট রেনডার হবে নাকি থ্রিডি রেনডার হবে, ফটোশপে আকব নাকি খাতায়। এইসব ভাবতে ভাবতে হয়ত কিছু স্কিল ডেভেলপ করেছি কিন্তু ক্যারেক্টার ডিজাইনের মূল জায়গা যেটা শেখায় কিভাবে একটা ক্যারেক্টার ধরতে হবে সেখান থেকে হয়ত অনেক সরে গেছি। ক্যারেক্টার আকা নিয়ে বর্তমান কিছু ভাবনা শেয়ার করতে এই লেখাটা। পুরোপুরি নিজের চিন্তা ভাবনা, নিজের অবসার্ভেশান, কিভাবে ভাবি সেগুলো শেয়ার করবার জন্যই এই লেখাটা। অনেক ভুল ভ্রান্তিও থাকতে পারে। তবে এখন মনে হয় শেখার বিভিন্ন স্টেজে যা ভাবছি সেটা ভুল হলেও লিখে রাখা ভাল। পরে ভুল বুঝতে পেরে শুধরে নেবার পরে মাথায় থেকে যায় লার্নিং টা।

যাক, ভুমিকা শেষ করে ঘটনায় আসি। ট্রাভেল ব্লগের ধাচে আমার চিন্তা গুলো লিখে রাখার প্ল্যান আজকে। ইদের পরদিন ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছি। মাওয়া লঞ্চঘাটে এসে লঞ্চে উঠলাম। পিঠে একটা ব্যাগ হাতে একটা লাগেজ। আকাশে মেঘ। লঞ্চ ছাড়তে দেরী হচ্ছে। ভেতরে সিট না পেয়ে ব্যাগ লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায়। এখানে দুটো ক্যারেক্টার দেখে তাদের ডিজাইন নিয়ে ভাবতে ভাবতে লঞ্চ যাত্রা শুরু।

আমার মনে হয় আমরা সারাদিন অসংখ্য মানুষ দেখে, শুনে, কথা বলে, বই পড়ে ক্যারেক্টার সম্পর্কে নিজের মনে মনে একটা পার্সেপশান ঠিক করে নেই। নতুন কোন মানুষকে দেখলে চট করে আমাদের সাবকনশাসে রাখা স্টেরিওটাইপগুলার সাথে মিলিয়ে তাকে একটা ছকে ফেলে দেই। কাউকে দেখলে ভাবি এ লোকটা  রাগী গুন্ডা টাইপ, কাউকে দেখেই ভাবি ঢংগি, কাউকে দেখে মনে হয় সাদামাটা ভাল মানুষ, আবার কাউকে দেখলেই মনে হয় ব্যাটা নির্ঘাত পকেটমার। এই ভিজুয়াল লাইব্রেরি আমাদের সবার মনের মধ্যে আছে কিন্তু ড্রয়িং করতে গেলে সেই লাইব্রেরি থেকে ভিজুয়াল সহজে মাথায় আসতে চায়না। রাস্তায় দেখলেই বুঝে ফেলি কার থেকে সাবধানে থাকতে হবে কিন্তু আকতে বসলে গ্যাঞ্জাম করতে পারে এমন একটা ক্যারেক্টার আকা কঠিন। এটার জন্যই ক্যারেক্টার অবসার্ভ করে তার কোন কোন ভিজুয়াল এলিমেন্টের জন্য তার ক্যারেক্টারিস্টিক ট্রেইট গুলো তৈরী হচ্ছে সেটা সাবকনশাস এর সাথে কনশাস মাইন্ডেও টুকে রাখা জরুরী মনে হচ্ছে ইদানিং।

আবার ফিরে যাই সেই লঞ্চের বারান্দায়৷ লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছে। আমার সামনে ষন্ডা মার্কা একটা লোক হুস হুস করে ঝালমুড়ি খাচ্ছে। এই আ্যাবস্ট্রাক্ট আইডিয়ার এবার ভিজুয়াল ব্রেকডাউন ভাবি মনে মনে।

ষন্ডা- কাউকে দেখলে ষন্ডা মার্কা মনে হবে কেন? লোকটাকে আর ভাল ভাবে খেয়াল করি। আমার থেকে একটু ছোট হাইটে। মাথায় চুল একদম ছোট করে ছাটা। ঘাড় বেশ মোটা। মাথা চৌকনা ধরনের। চোখ গুলো গোল গোল, দুই চোখের মাঝে ডিস্টান্স আছে। নাকটা ছোট, চওড়া। গায়ের রঙ কালো এর দিকে। চোখ গুলো হলিদাভ লাল। শার্টের একটা বোতাম খোলা উপরর, কলার ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে। শার্ট টা চেকের, হাতা গুটানো। জিন্সের প্যান্টের ভেতরে ইন করা। ঘাড় অনেক মোটা৷ জিনস পরনে, জিনসের কোমরের কাছে অ্যাটার্ন আকা। আকাশী নীল কালারের রংং ওঠা জিন্স। পায়ে কেডস। সাদা রঙ। রেলিং এ পা ভর দিয়ে দাড়ান। হাতে ঝাল মুড়ি এর কাগজ৷ ঝাল মুড়ি এর সাথে দেয়া ভিজিটিং কার্ডটায় করে খেতে শুরু করে একটু পর দেখলাম হাতে ঢেলে খাওয়া শুরু করে দিল। ঝাল মুড়ি এর কাগজটা হলুদ মশলা মাখা। ডান হাতে প্যাকেট ধরে বাম হাতে ঢেলে খাচ্ছে। মুড়ি চিবানর সময় মুখটা এক পাশে বেকে যাচ্ছে অনেকটা। মাড়ির দাত দেখা যাচ্ছে। দেখে অনেকটা ব্যাটম্যান ভিলেন হার্ভি ডেন্ট এর কথা মনে হল। মুড়ি চাবাচ্ছে, হুস হুস করে মুখ টা আবার চিকন করে ফেলছে ঝালের গরমে। মুড়ি চাবানর সময় চোয়াল নড়ছে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে হাড়ের মুভমেন্ট, মুখে দাগ, ঠোটে লেগে আছে ভাংগা মুড়ির গুড়ো।

এত ডিটেলে দেখতে দেখতে মনে মনে নোট নিয়ে নিলাম ক্যারেক্টার ডিজাইনের। প্রায় ৪০ মিনিটের লঞ্চ জার্নি- যেতে যেতে লোকজন দেখে দেখেই সময় কাটানো।

এর মধ্যে আর এক ক্যারেক্টার পাশ থেকে। দেখেই মনে হয় লোকটা চাল্লু টাইপের। এই চাল্লু টাইপের ভিজুয়াল ব্রেকডাউন ভাবা যাক।

একদম চিকন সাইজের একটা লোক। মাথাটা অনেক বড় দেখায় ফিগারের অনুপাতে। গাল ভাংগা, চোয়াল অনেকখানি বের হয়ে আছে। চৌকো লম্বাটে মুখ। চুল দিয়ে কপাল অনেকখানি ঢাকা। ফোলা চুল মাথায়। চোখ গুলো বড় বড়, মুখে চাপ দাড়ি, খোচা খোচা। হাসলে কথা বললে মুখের কাটা বেশ বড় করে দেখা যায়। মুখে হাসি লেগেই আছে। গায়ে কাল একটা রাউন্ড নেক টি শার্ট, বড় করে লেখা হ্যাপিলি আন ম্যারিড। নিচে জিনস, ন্যারো ফিটিং এর৷ ফেডেড নীল রঙ, পায়ে লোফার ডিজাইনের জুতো। টকটকে লাল- উপরে একটা গোল্ডেন পিন। লোকটা সারাক্ষন কথা বলছে। এই ফেরিওয়ালার কাছে বেনসনের দাম জিজ্ঞেস করল, এই পাশের লোকের কাছে আগুন চেল, মাঝ নদীতে ঢেউ কত বড় হয় তা নিয়ে জ্ঞান দিল, আমাকে চেনা চেনা লাগছে বলে খুলনায় বাড়ি কোথায় জানতে চেল। খানিক পরে দেখলাম লঞ্চের ছাদে নামাজে বসেছে।

এই ডিটেলে ক্যারেক্টার দেখার প্র‍্যাক্টিস করলে দেখা যায় আশ পাশে এত এত আনএক্সপ্লোরড ক্যারেক্টার লোকেশান স্টোরি রয়ে গেছে, একে লিখে শেষ করা যাবেনা।  একটা ক্যারেক্টার আকার সময় সেটার ব্যাকগ্রাউন্ড ভাবা, ক্যারেক্টারের অনুভুতিগুলো নিজে ফিল করা, ড্রয়িং এর ভেতরে এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আসতে সাহায্য করে। আমি লঞ্চে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝাল মুড়ি খাওয়া দেখতে দেখতে নিজে যখন মুড়ি চাবানর অভিনয় করতে যাই তখন সেই জেশ্চার আমার নিজের ভেতর ফিল করতে পারি। নিজে ফিল করার পর সেই ফিলিং টা ড্রয়িং এ ট্রান্সফার করা যায়। তার আগে না। এই ট্রান্সফার করার সময় দরকার হয় স্কিল, প্র‍্যাকটিস এবং টেকনিকাল নলেজ। একই সাথে দরকার হয় আ্যবস্ট্রাক্ট ফিলিং গুলোকে ডিকন্সট্রাক্ট করে কী ভিজুয়াল এলিমেন্ট গুলো আইডেন্টিফাই করা।

নিজে ড্রয়িং এর সময় এরকম অনেক চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে আকতে গেলে দেখা যায় শেষ মেষ লেজে গোবরে হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করছি এগুলো মাথায় নিয়ে আস্তে আস্তে কিছু লেয়ার চিন্তা ভাবনা কমিয়ে কী মেসেজ কীভাবে দেওয়া যায়।