সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

শাদা রঙ

 অনেক দিন বাদে ব্লগ খুললাম। ডায়রি হিসেবে কিছু দিন পর পর লেখা উচিত কিছু না কিছু। সময় কাটানোর থেকে সময় ধরে রাখার জন্যই লিখতে বসা। সময় কেটেই যায়-একা ঘরে বসে হিটার ছেড়ে নেটফ্লিক্সে, ফটোশপে, পেন ট্যাবে, স্কেচ খাতায়, মোবাইলে, ছোট থেকে ছোট তর ভিডিওতে উড়ে যায় ঘন্টা তিন। ঘন্টা তিনেকের ছবি দেখতে ক্লান্তি আসে কিন্তু ১৫ সেকেন্ডের বিন্দু বিন্দু শিশিরকনার মত করে সময়ক্ষেপন করা খুব সহজ। সে আলাপ আরেকদিনের-আজকে লিখতে বসার কারন হল রং।

সাদা-নাকি শাদা-বরফশাদা রঙ এর সাথে প্রথম পরিচয় হল আজকে আমার। কখনো বরফ দেখিনি-দেখিনি রাতে দেখা পাতা ঝরা গাছগুলির সকালে শাদা রঙ এর সাজ, দেখিনি কালকেও সবুজ থাকা মাঠে জমে ওঠা শাদার ভেতর কুকুরের পায়ের ছাপ, কোন দিন দেখিনি আকাশের শাদা রঙ মিশে গেছে বাড়ির চালে জমে থাকা শাদায়। তুলোর মত বরফ কথাটা পড়েছিলাম-আজ সেই কথাটা ধরে দেখলাম। হাফপ্যান্ট পরে কি তুষার দেখা যায়? খালি মাথায় একটা হুডি গায়ে চাপিয়ে স্যান্ডেল পায়ে দিয়েও তুষার দেখা যায়? নাকি ঐ পাট পাট করা জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে নিজের সিলুয়েট টাকে বিশালাকায় করে না তুললে তুষারে হাটা যায় না? এসব প্রশ্ন আর মাথায় আসবে না।

সব কিছু শাদা হয়ে যাক। রঙ এর ক্যানভাস মুছে যাক-একটা লাল জ্যাকেট ফুটে থাকুক শাদার ভেতরে। চারিপাশের নিত্যদিনের মনোটনি ভেঙ্গে যাক গুড়ি গুড়ি হোয়াইট নয়েজে। গাছের ডালে পাতার বদলে ফুটুক শাদা রঙ এর রিম লাইট। আর কাক গুলি উড়ে বেড়াক, বলে বেড়াক সবাইকে উইন্টার ইজ কামিং।

যাই ভাট না বকে ক্লাসের এসাইনমেন্ট শেষ করি।

রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্কুল জীবন

স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম আবার এই ত্রিশ দশকে। অনেকদিন বাদে আবার ক্লাস, হোমওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, ক্লাস লেকচারের খাতা, কলম। পড়া শুনার এই ধরনটা অবশ্য আগের থেকে একদম আলাদা-হাতে কলমেই মুল পড়ালেখার কাজ চলছে। ক্যাম্পাসে ক্লাসে ল্যাবে সফটওয়্যারের হাতেখড়ি পর্যায়েই আছি এখনো। নতুন করে এই ক্লাস শুরু করে নতুন  কিছু উপলব্ধি আসল নিজের মধ্যে। যেমন সব দেশে সব ক্লাসেই কিছু ছেলে পেলে থাকে ব্যাকবেঞ্চার, কিছু ফ্রন্ট লাইনার, কিছু ন্যাচারাল লিডারশিপ, কিছু ডেডিকেটেড হার্ড ওয়ার্কার। কয়েকজন আছে সব কাজ সবার আগে শেষ করে ফেলব, কিছু থাকবেই জমার আগের দিন করতে বসে কাজ তুলে ফেলছে। কারো লক্ষ্য নিজের ভিশনে পৌছতে যা দরকার তা করে ফেলি, কেউ চায় ডেডিকেশন নিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করে নিখূত কাজ। কলেজ ক্যাম্পাসের আড্ডা লেখা পড়া নিয়েই, তার বাইরের আলাপ বুঝতে পারা আমার জন্য এক চ্যালেঞ্জ। সদ্য স্কুল পাশ ভিনদেশি কালচারের বিশ দশকের সাথে ক্লাস লেখাপড়ার সাবসেট টুকুই আলোচনার সম্বল। তবু সব মিলিয়ে নিজের পড়া শুনার কাজটা টুক টাক গুছিয়ে নিচ্ছি।

হাউসমেট দের সাথে হ্যালো গুডমর্নিং, বাড়িতে ফোন দিয়ে দুপুর বেলায় গুডনাইট, সন্ধ্যা বিকালে মাঠে দৌড়নো বা জিমে ঘাম ঝরানো, বাসে করে সপ্তাহের বাজার নিয়ে ফেরা-এই মিলিয়ে দিন  কাটছে। পরীক্ষামূলক রান্না করি, নিজের কাছে নিজেকে টেনে টুনে পাশ করাই। ঠান্ডার দিন গুলোতে ইচ্ছে হয় একটু আলসেমি করি, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি, ধোয়া ওঠা খিচুড়ি খাই। তখন ই মনে পড়ে এসাইনমেন্ট জমার দিন কালকে, সকাল নাগাদ বৃষ্টি পড়তে পারে- তার আগেই বাজার টা ঘরে তোলা দরকার, লন্ড্রী বাস্কেটে কাপড়ের পাহাড়, ফ্রিজের টাপারওয়্যারের বক্স ঠন ঠন। তাই টেনে তুলে নিজেকে পড়ার টেবিলে বসাই। মায়া সফটওয়ারের বোতাম চাপি, রান্না চড়াই, আর কানে গুজে রাখি হেডফোন।

আজকে একদম ভাবনা চিন্তা ছাড়া এলোমেলো লেখা। ভিডিও বানাবার প্ল্যান করছি কিন্তু করে ওঠা হচ্ছে না। কত কী করার ছিল যে-অঞ্জন বলে গেছেন ঠিক ই।

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সন্ধ্যা

 সন্ধ্যার সাথে দিন চক্রের একটা অদৃশ্য কানেকশন আছে। সন্ধ্যা মানেই পাখিদের ঘরে ফেরা, আকাশ লাল করে সূর্য ডোবা, সন্ধ্যা মানেই ছোটদের খেলার সময় শেষ, মসজিদে আজানের স্বর। সন্ধ্যা মানে ছিল অফিস শেষ করে হাটতে হাঁটতে বের হওয়া, রাস্তায় নুডলস, চিকেন এর দোকান এর পাশ দিয়ে যাবার সময় খুচরো খাওয়া দাওয়া, সন্ধ্যা মানে ছিল মোগলাই, জিলাপি, পুরিতে ধোঁয়া ওঠা কামড়।

কিংবা সন্ধ্যা মানে বাসের লাইনের ভিড়ে আমি দাঁড়িয়ে, কানে হেডফোনে রেডিওতে বাজতে থাকা শো, বাস না পেলে অচেনা বাইকারের পিছে সিট আকড়ে বসে থাকা, বায়ে প্লাস্টিক, ডানে এম্বুলেন্সের হিসেব কষে ফুটপাথ দিয়ে বাইক উঠিয়ে সময় বাচানো, ফ্লাইওভারে উঠে রাতের শহরের কাপা কাপা রাস্তা, মার্কেটের দোতলার চায়ের দোকান।

সন্ধ্যা ছিল পড়তে বসা, সন্ধ্যা ছিল কোচিং ছুটি, সন্ধ্যা ছিল চাদরাতে ঘুরতে বের হওয়া, সন্ধ্যা ছিল স্বাধীনতার প্রথম সিঁড়ি। সন্ধ্যা ছিল লেকের পাড়ে আড্ডা, স্কেচবুকে টুকিটাকি, মার্কেটে হাটা হাটী, শেষতক কফিশপে এক্সট্রা চিনির স্যাশেতে। সন্ধ্যা নিশ্চুপে প্রতিদিন এসে জানান দিয়ে গেছে একটা দিনের শেষ।

এখানে কি সন্ধ্যা হয়? ১৫ ঘন্টার দিনে কটকটে দিনের আলোতে অফিস ছুটির ঘন্টা বাজে, বিকেল পড়লে কফিশপে তালা ঝুলে, আলো পড়ে এলে শপিং মল বন্ধ। ঘড়ির সাথে দিনের আলো আর মিলাতে পারি না। বিকেলে না আমি হাঁটতে যাব? সন্ধ্যা হলে না পড়তে বসব? ফুটবল মাঠে দৌড়চ্ছি কিন্তু সন্ধ্যা হচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাস কেটে যাচ্ছে কানের দুপাশ দিয়ে কিন্তু সূর্য ডুবছে না। আকাশ লাল হয়ে আসছে, ঘন্টার কাটা ঘুরছে-৭ টা, ৮ টা বেজে গেল-সন্ধ্যা হবে না? ফিরব না ঘরে?

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কী নাই

প্রবাস জীবনে এখনো হানিমুন ফেজ চলছে-এদিক সেদিক যাই, খাই দাই, ঘুরি ফিরি। ব্যস্ততা, দৈনন্দিন হিসাব নিকেশ, মাসের শেষে বিলের ধাক্কা, কাজ কর্ম কিছুই শুরু হয়নি এখনো। রঙ্গিন চশমা এটে তাই আশ পাশ দেখি, কিন্তু কি যেন নেই। রাস্তা পার হবার আগে বেল টিপে কানে হেডফোন গুজে নিশ্চিন্তে  চলে যাওয়া যায়-ডানে বামে তাকিয়ে পার হওয়ার সেই শিক্ষা অকেজো এখন। বাস স্ট্যান্ডে দাড়াও-গুগল বলে দিবে কোথায় আছে বাস, ফোনে নম্বর টিপে জেনে নিতে পার পরের বাস আসতে কত সময় লাগবে। "ভাই অমুক জায়গায় যেতে কোন দিকে যাব" -এই প্রশ্নে অচেনা কারো হাত নেড়ে মোড়ে যাবার আশ্বাসে হাটবার সময় ফুরিয়েছে। দেখতে দেখতে ট্রেন চলে আসে, স্কাই ট্রেন, মেট্রো রেল, এক্সপো লাইন, কানাডা লাইন। টিক টিক করে সময় বলে দিচ্ছে ২ মিনিটের মাথায় এসে যাবে ট্রেন-ঘড়ির কাটা ধরে ঠিক ঠিক নামিয়ে দেবে স্টেশনে। টুক টুক করে কার্ড ঘষটে নেমে ম্যাপ দেখে দেখে চলে যাও রাস্তা ধরে।

শহর থাকবে অনেক গোছান, উচু নিচু রাস্তার পাশ ধরে হেটে গেলে দূর দূরান্ত আকাশ দেখা যাবে। ঢাকায় মনে পড়ে সাগুফতা দিয়ে হেটে সামনে গেলে অনেক খানি আকাশ দেখা যেত। প্রতিবার দেখার সময় একটা আশ মিটিয়ে দেখে নেবার সাধ ছিল কারন আশংকা কদিন বাদেই হয়ত আকাশটাকে গিলে খাবে গা ঘেঁষে উঠে যাওয়া আবাসিক বিল্ডিং আর ফ্লাইওভারের পিলার। এখন আকাশ দেখি-দূরের শহর দেখি-তারো পিছে পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ দেখি। দেখতে দেখতে পাখিরা উড়ে যায়-নটার সময় সন্ধ্যা নামে। একা রাস্তায় হেটে হেটে ফিরি। এই মনে হয় ছিনতাই হয়ে গেলাম নাকি এই বুঝি সামনে কেউ এসে ঠ্যাক দিল, ভাবতে ভাবতে দেখি পাশ দিয়ে নিশ্চিন্তে সাইকেল চালিয়ে গাছের সারি পেরিয়ে যাচ্ছে এক ভিনদেশি মেয়ে। বাতাস আছে, গাছপালা আছে, পাখির ডাক আছে, সারাজীবন পিসি তে গেম খেলার সময় দেখে আসা কোম্পানির লোগো সহ অফিস আছে, কিন্তু কী যেন নেই।

বুটিক শপের আশ পাশ দিয়ে ঘুরি, দেয়ালে আকা গ্রাফিটী দেখি, স্কোয়ামিশ মানুষের ইতিহাস ঘাটি গুগলে। সাদা,কালো, ধুসর বা এক রঙ্গা ফ্যাশনে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে হুট হাট চোখে পড়ে দু একজন আল গোছে নকশী কাটা ব্যাগ ঝুলিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে। ঘুরতে এসে আইসক্রীম না খেলে কেমন হয়, ৭০ এর নামতা পড়ে খানিক হিসেব কষি-তারপর কি হবে এত ভেবে বলে চামচে কেটে নেই ব্ল্যাকফরেস্ট ব্লাস্ট এর স্কুপ। একই রকমই-৯০ দশকের বিদেশ দেখা আর ২১ এর গ্লোবাল যুগে এসে বিদেশের স্বাদ দেশের মতই লাগে। পাখি গুলো পায়ের উপর দিয়ে হেটে যায়-মানুষকে ভয় পাবার কোডটা ওদের জিনে এখনো লেখা হয়নি। চি চিই শব্দ করতে করতে থপ থপ করে হেটে বেড়ায় আশ পাশ দিয়ে-চুপ করে বেঞ্চের পাশে বসে শুনে নানান দেশের গল্প। বসে পড়ি প্রাইড ফ্ল্যাগ উড়তে থাকা একটা ইয়ট এর পিছে-এর মধ্যে লাইভ গান ভেসে আসে। স্কট জেকব নামের ইন্সটাগ্রাম গায়ক কালো টিশার্ট আর জিনসের শর্টস পরে স্যান্ডেল পায়ে গেয়ে যাচ্ছে অনলি নো ইউ লাভ হার হোয়েন ইউ লেট হার গো। 

নীল পানির মৃদু মন্দ স্রোত, বিকেলের পড়ে আসা রোদে ঢিলে সোয়েটার পরে সান কিসড ছবি, বাজারের পলিথিন ব্যাগে পেয়াজ, ব্যাগের ভেতরে পড়ে থাকা স্কেচবুক, গিটারের সামনে ১০ ডলারের সিডির বাক্স, দৌড়ে পার হয়ে যাওয়া রোলার স্কেট, বাচ্চাদের ছুটোছুটী-সবই  হোয়াইট নয়েজে মিলিয়ে যায়। যেন মুভির একটা সেটে বসে থাকা এক্সট্রা আমি-ছক বেধে হিসেব কষে চলছে সব পাশ দিয়ে। স্ক্রিপ্ট বেঁধে ডিরেকটর, সিনেমাটোগ্রাফার, আর্ট ডিরেকটর পরের শট টা বলে দিচ্ছেন। পারফেকশনের মধ্য দিয়ে কাঠের তক্তায় জুতার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে রেলিং এ ঝুকে তাকাই নিচে। পানিতে রিফ্লেকশন বলে দেয় হাতে তাকিয়ে দেখ-ধোয়া ওঠা সর ভাসা দুধ চার কাপটা নেই।

শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা টু ভ্যানকুভার

পাগলামি জীবনের এক বাঁকে এসে মোড় ঘুরে পৌছলাম ভ্যানকুভার। এবারের টার্গেট আবার পড়াশুনা-বিসি আই টি তে থ্রিডি মডেলিং, আর্ট এবং এনিমেশনের ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে দু বছরের কোর্স। নতুন শহর, নতুন জায়গা, নতুন দেশ-প্রতিদিন মনে হচ্ছে নিত্য নতুন জিনিসের সাথে পরিচয় হচ্ছে। চেনা কাজ গুলি নতুন করে শিখতে হচ্ছে-শিখতে হচ্ছে রাস্তা পার হবার মত দৈনন্দিন জিনিস ও।

চারপাশ খুব নির্জন, বেসমেন্টে বসে বাইরের গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যায় শো শো। ভাগ্য ভাল আমার এক পরিচিত কাছের বন্ধু পেয়ে গেছি এই দূর দেশে। পাতাল থেকে বেরিয়ে আকাশের ট্রেনে চেপে চলে যাওয়া যায় ডাউনটাউন। চোখ ধাঁধান প্রাসাদ সমান বাড়িঘর, নীল আকাশ, গুটি গুটি পায়ে সিগনাল পেরুন ছোট্ট কুকুর, হাত ধরে হাটতে থাকা কপোত কপোতি, সবাই আছে নিজের মত। ইংরেজি দেশে এসে কানে ভেসে আসে সারা বিশ্বের আওয়াজ, শাঁই করে পাশ কেটে বেরিয়ে যায় একটা ল্যাম্বো, রোদের তাপটা খুব চোখে লাগে, ডাউন হিল হাটতে হাটতে ক্যামেরায় বন্দী করি আশ পাশ, ভীড়ের মাঝে খুজি একটা চায়ের আড্ডা, ভদ্রতার মুখোশ এটে নিস্পৃহ ভাবে হেটে চলছে সবাই-নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে দেয় হোমলেস লোকটা চিৎকার, আকাশ বাতাস কাপিয়ে সে জানায় তার কাপড় সে ধুতে পারেনা এই দেশে-কেউ ফিরে তাকায় না। মাপ করেন বলে চলে আসার অভ্যাসটা বদলে অদৃশ্য হিসেবে ধরে নেওয়ার নতুন একটা অভ্যাস করে নিতে হবে।

দিনের আলো থাকে, কিন্তু রাত হয়ে যায়-আলো পড়তে পড়তে শহরটার মানুষ কমতে থাকে। দোকান পাট গুলির ভেতরে আলো আছে-কিন্তু মানুষ নেই। খাবার দোকান বন্ধ ন টায়-টেনে টুনে দশটা। তারপর নির্জন, শুনশান। মেট্রোটাউন স্টেশনে নেমে ক্রিস্টাল মল, তার ভেতর দিয়ে এক নগ্ন মারমেইড স্ট্যাচুর পাশ হেটে মোড়ে এসে ডানে ঘুরে যাও-মোবাইলে সিম নেই-গুগল ম্যাপের বদলে তাই মাইন্ড ম্যাপ ধরে দু দিন ফিরতে হয়। মিনিট বিশেক হেটে বাসায় ফেরার রাস্তা-একা একা কাজ করার অভ্যাস থাকলে খুব কাজের জায়গা। কেউ ডাকবে না, ফেরাবে না, সাধবে না কিছু। কানে হেডফোনে বাজুক বাংলা গান-প্রিয় আকাশী।

ব্লগর ব্লগর আজকে খুব একটা জমছে না-কিছু আকতে হবে।



বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১

রঙ চং

চোখের সামনে ঘটতে থাকা জীবন খুব সাধারন-সাদামাটা-সাধাসিধে-বড্ড চেনা। এক তালে চলছে ঘড়ির কাটার সাথে টিক টিক টিক টিক-এক সেকেন্ড এখানে এক সেকেন্ডেই শেষ হয়, ঘন্টা হয় ৬০ মিনিটে, ২৪ ঘন্টায় শেষ হয় এক দিন। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরার চোখে? মানুষের চোখের ঐ চিরচেনা আই লেভেল আর ১৭ মিলি এর লেন্সে আটকে নেই-জুমে যাচ্ছে, উপরে যাচ্ছে, নিচে যাচ্ছে, চাই কী চলে যাচ্ছে পাখির চোখে। দিন চলে যাচ্ছে চোখের পলকে, বিটের তালে তালে, মাপা মাপা ট্রানজিশনে-আবার পলকের মাঝে হারিয়ে যাওয়া মুহুর্তকে টেনে হিচড়ে মিনিটে কাটাচ্ছি। বাস্তবের জীবনে ছন্দ পতন নেই-আবহ সংগীত নেই-নির্লিপ্ত ভাবে বাস ট্রাকের আওয়াজের মাঝেই হয়ত গান গেয়ে উঠে কেউ কেউ।

চোখের সামনে ঘটতে দেখা ভয়ানকতম, আশ্চর্যতম, নিকৃষ্টতম ঘটনাটাও স্বাভাবিক যেন। একটা গুলি চলতে সময় লাগে ১ সেকেন্ড, লাগতে মিলি সেকেন্ড, আর শেষ নিঃশ্বাস টা বেরিয়ে যেতে ২ সেকেন্ড। কিন্তু ক্যামেরায়? পর্দায়? মোবাইলের টাচ দেয়ালে? সেখানে সময় আটকে যাবে, সাউন্ড ইফেক্টে বুক টা কেপে উঠবে, নেপথ্যে ভাষ্যকার করে উঠবেন আর্তচিৎকার, পর্দায় আসবে আতংকের বানী-শেষে থাকতে পারে কল টু একশন। তবেই না বাস্তবের ভয়ংকর রূপটা মানুষের মনে ঢুকবে। গনপিটুনির ভিড়ভাট্টার একদম পিছে থাকা লোকটার থেকে সিসি ক্যামের সামনে বসে থাকা লোকটা পিটুনির ভয়াবহতাটা ভালভাবে দেখে।

এই কায়দাগুলি কাজে লাগিয়ে বাস্তবটাকে রঙ চড়িয়ে খুব সাদামাটা জিনিসও আজকাল দেখার মত। ফেসবুকে লোকজন খেতে যাচ্ছে, বাসে চড়ছে, কাজে যাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে, খেতে কাজ করছে, মুলো শাক বাছছে, পেয়াজ ভাজছে, বোতল ভাংছে, গাড়ি চাপছে, পাহাড় বাইছে, চানাচুর খাচ্ছে, মাংস কাটছে, ছবি তুলছে, আলু বুনছে-সবাই দেখছে। দেখছে। চোখের সামনেও এসব ঘটছে-কিন্তু পর্দায় দেখছে। গিলটি প্লিজার-নির্দোষ আনন্দের উলটো। নিষ্ক্রিয় আনন্দ। সম্মোহনের আনন্দ। হোয়াইট নয়েজ। হোয়াইট নয়েজ। হোয়াইট নয়েজ। সবই কনটেন্ট, সবাই কনজিউমার। পাচ মিনিটের ক্রাফট, পাচ মিনিটের শব্দ আর আলোর মিক্সচার। টুক করে খেয়ে নিন-সহজ পাচ্য। পুষ্টীগুন? শিক্ষা? বিনোদন? কুশিক্ষা? কিছু পাবেন না-পাচ মিনিটের খোরাক-পাচ মিনিটেই গায়েব।

বুড়ো মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা যুগে যুগে ছিল, আছে, থাকবে। এসবে পাত্তা দিবেন না।






রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

আমার সিংগাড়া খেতে ভাল লাগে না

 ইদানিং সিংগাড়া খেতে আর ভাল লাগে না। আগে মনে আছে সিংগাড়া অনেক মজা করে খেতাম। ফকিরাপুলের কাছের অফিসের নিচের দোকানে খাওয়া সিংগাড়ার কথা অনেক মনে পড়ে। অফিস কাজের ফাকে ১১-১২ টার দিকে এনাম ভাইকে নিয়ে টুক করে বসের চোখ এড়িয়ে নিচে চলে যেতাম। অফিসপাড়ার গরম থাকত দোকানটায়-শেয়ার, লোন, টাকা, কড়ির আলোচনার মধ্যে সাদা প্লেটে বড় বড় কাটা পেয়াজ সহ চলে আসত সিংগাড়া।  ভেতরে বাদাম থাকত, নাকি থাকত না-আলুর সাথে কি মাখিয়ে যে সিংগাড়া গুলো তৈরী হত জানি না। ফু দিয়ে টকে ডুবিয়ে সেই সিংগাড়া খাওয়া হয়নি অনেক দিন। এখন খেতে গেলে এসিডিটি, গ্যাসট্রিক এসবের চিন্তা সেই স্বাদকে আটকে দিতে চায় মনে হয়। সিংগাড়া এখন খেতে গেলে খোলস টা মোটা মনে হয়-নিচের কোনার দিকের অংশ গুলো ভেঙ্গে রেখে দেই। কারন ওখানে খাবার মত কিছু নেই-শুধু পেয়াজ কাচা মরিচ আর টক দিয়ে একসময় ঐ মুড়োন খোলস গুলো ও খেয়ে ফেলতাম।

তবে এখন সমুচা ভাল লাগে। তিনকোনা পাতলা পরতের সমুচা-এর সাথে পেয়াজ চলেনা। তেতুলের টক হলেও সই, না হলেও ক্ষতি নেই। ভেতরে ক্যারামেলাইজড পেয়াজ, ঝালের বাড়াবাড়ি নেই, আলুর বাড়তি নেই। তিন কামড়ে একটা শেষ-ছোট ও হতে পারে, এক বারেই মুখে চলে যাচ্ছে। প্রথম কামড়ের পর টকে ডুবিয়ে অন্য রকম একটা দ্বিতীয় কামড়। স্কুলের কথা মনে পড়ে যায় সমুচায়-টিফিন টাইমে ফ্রেন্ডস কর্নার, ছুটির দিনে হার্ট ওয়ার্ল্ড-তেতুল বিচি ভাসা বাদামি রঙ এর টক-টিনের প্লেটে সমুচা। ২ টাকা পিস হয়ত।

এখন তাই সমুচা খাই। সিংগাড়ার স্বাদ নিতে ভুলে যাচ্ছি-সমুচার প্রেম আবার ফেরত আসছে। ৩০ এর দশক টাই নাকি এমন-স্কুল ফ্রেন্ডরা আবার অনেক আপন হয়ে যায়। নস্টালজিয়া ফেরত আসতে থাকে- স্মৃতির কুয়াশা ঘেরা অলি গলি হাতড়ে বেড়াতে মন চায়। অনেক অনেক দূরে চলে যাবার আগে মেমোরি গুলোকে আর একবার ঝালিয়ে নিয়ে সময়গুলো বয়ে যেতে দেখা।

বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১

আমাদের শেষ নিঃশ্বাস কবে ছিল?

 আমাদের শেষ নিঃশ্বাস কবে ছিল?

শেষ কবে প্রান খুলে শ্বাস নিয়েছি?

মহামারীর দিন গুলি কেটে যাচ্ছে একটার পর একটা, সিনেমায় মেশিন গান থেকে যেভাবে গুলির খোসা একটার পর একটা ছন্দে পড়তে থাকে সেভাবে। বৈচিত্র ছাড়া একটানা।

কিন্তু তার আরো অনেক অনেক আগেই, আমরা কি শেষ নিঃশ্বাস টা নেইনি?

দায়িত্ব, জীবন বাস্তবতা, সংসার, চাকরি- এসব কিছু কি আসলে মুখোশ? আমাদের ভেতর টা কী আরো আগেই মারা যায়নি?

কাজ কর্ম চাকরি বাসা বাড়ি-এসবের আড়ালে থেকে আমরা ভাবি জীবনটা কেটে গেল এই করতে করতে-কত কি না করতে পারতাম এসব না থাকলে। কিন্তু আমরা স্বীকার করিনা যে এগুলি না থাকলেও আসলে আমাদের কিছু করার নেই আসলে। আমরা রোমান্টিসাইজ করতে পারি যে অনেক কিছু করতে পারতাম হয়ত অবসর পেলে, কিন্তু অবসরে কিছু করার মন আমাদের আর হয়ত নেই।

নতুন গান শুনে এখন আর অবসর ক্যাটাতে পারি? একটা নতুন গান নিজের পুরনো ৯০, ২০০০ দশকের প্লে লিস্টে জায়গা করে নিতে পারে? কোন সিরিজে শুনা একটা গানের লিরিক লিখে ইন্টারনেটের তস্য গলি ঘুপচি ঘেটে ইন্ডি, পপ, রক গান বের করার ইচ্ছা টা তো মরে গেছে।

অবসর পেলে এখন আর ইচ্ছা করে না নতুন গেমটা খেলি। একটু অবসরে ঝির ঝিরে মনিটরে কনভার্টার কেবল লাগিয়ে গেম খেলার ইচ্ছে গুলো মরে গেছে-মৃত জম্বি লাশকে টেনে আনার মত গেম বানাবার চেয়ে এখনকার অবসর কাটানো মনকে আকর্ষন করা সহজ। তাই গেম গুলিও সেই আগের ট্রোপেই ঘুরপাক খায়-ঝা চকচকে গ্রাফিক্সে এখন খেলতে পারলেও জীবনের সেরা গেম বলে মনে হয় ১৪ ইঞ্চি সি আর টি মনিটরে স্কুল ফাকি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলে শেষ করা এক অখ্যাত গেম।

এখন আর ভাবা যায়-অবসরে এক পাল ছেলে পেলে মিলে একই রকম ড্রেস পরে, ঝুম বৃষ্টী কাদায় কাক ভেজা হয়ে নিশ্চিন্তে হাটতে হাটতে বাড়ি ফেরা? মোবাইল ভেজার ভয় নেই, মানিব্যাগের কার্ড হারাবার ভয় নেই, জুতো কাদা মাটিতে নষ্ট হবার ভয় নেই, চুল ভিজে ঠাণ্ডা লাগার ভয় নেই, ছাতা রেইনকোটের বালাই নেই-এখন আর ভাবা যায়? সব দায়িত্বের মুখোশ টেনে ফেললেও তো ইচ্ছে গুলো জাগে না আর।

তাই আমরা ডুব দেই কাজের আড়ালে। ব্যাস্ততা, ম্যাচিউরিটি, কাজ, গাম্ভীর্য এর আড়ালে লুকোই। নিজেকেও হয়ত বোঝাই সময় নেই বলে হচ্ছে না কিছু। কিন্তু আয়নার সামনে দাড়ালে বুঝেই যাই, ঐ পুরনো ছেলেটা মরে গেছে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

আঁকার হাতে খড়ি-পর্ব ২

প্রথম পর্ব

আঁকতে শেখার ব্লগের দ্বিতীয় পর্ব-আকার হাতে খড়ি এর পর কী আসে? ক্লাস ১, ২, ৩, ৪ করে যেভাবে আমরা পড়তে পড়তে আগাই তেমন কোন সিলেবাস-গাইড লাইন কি ছবি আকার ক্ষেত্রে করা সম্ভব? নিশ্চয় সম্ভব-সারা বিশ্বে এত এত আর্ট স্কুলে কারিকুলাম করেই নিশ্চয় শেখান হচ্ছে। তবে ক্যাজুয়ালি আর্ট শেখার শুরু কিভাবে হতে পারে?একশনেবল কিছু পয়েন্ট কি নোট করা যেতে পারে আকা শেখার জন্য? 

থিওরি, গ্রামার এসব দূরে রেখে শুরুতেই বলি মাইলেজের কথা। মাইলেজ ছবি আকার জন্য খুব ইম্পরটান্ট একটা টার্ম- মাইলেজ মানে কতগুলি ছবি আপনি আকলেন-ছবি আকার কতখানি অভিজ্ঞতা জমা হল আপনার ঝুলিতে। কিছু না জেনে বুঝে একই ছবি ১০০ বার আকলেও কিন্তু আপনার প্রথম চেষ্টার থেকে ১০০ নম্বর চেষ্টার আউটপুট বেটার আসবে। 

মাইলেজ বা আকতে আকতে শেখার পাশা পাশি কিছু টাচ পয়েন্ট ধরে ধরে ও আকার প্রগ্রেস আগানো যেতে পারে। এগুলির জন্য সব থেকে ভাল খাতা কলমে আকান। ডিজিটাল সফটওয়্যার, ট্যাব, এন্ড্রয়েড, আইপ্যাড, স্টাইলাস, এপ্স-এসবে একসেস না থাকলে আকা শেখায় গোড়ায় গলদ ভেবে বসে থাকলে কাজের কাজ হবে না।  এই সহজ কথাটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমি আমার নিজের লাইফেও পদে পদে অনেক সময় অনেক কাজ শুরু করার কথা ভাবিও এবং অনেক টাকা পয়সা খরচ করে প্রো স্কিলের গ্যাজেট কিনে শেষ মেষ রেগুলারিটি এবং প্র্যাকটিসের অভাবে ফেলে রেখে দেই। মনে রাখবেন আপনি আধো আধো কথা বলতে শেখা এক শিশু মাত্র-আপনার গান হাই কোয়ালিটি মাইকে সাউন্ডপ্রুফ রুমে রেকর্ড করলেও তাতে আপনার গলা দিয়ে প্রফেশনাল গান বের হবে না।

যেকোন ভাষা শিক্ষার প্রসেসের ভেতরে অনেক রকম থিওরি, অনেক রকম হাইপোথিসিস আছে। ছবি আকা যেহেতু কমিউনিকেশনের ই একটা মিডিয়াম বা ভাষা-তাই এখানের চ্যালেঞ্জ গুলিকে ভাষা শিক্ষার চ্যালেঞ্জ দিয়ে অনেক সময় ব্যাখ্যা করা যায়।  ভাষা শেখার মনিটর মডেলের ইনপুট হাইপোথিসিস বলে আপনি তখন ই ইফেকটিভলি শিখবেন যখন আপনার স্কিল লেভেলের থেকে অল্প একটূ হাই লেভেলের স্কিলের চ্যালেঞ্জ ফেস করবেন। অনেক হাই স্কিলের টাস্ক আপনাকে ফ্রাসট্রেট করে দিবে যেটা আমরা বিগিনার স্টেজে আর্টস্টেশন, ইন্সটাগ্রামে খুব ফেস করি। ওয়ার্লড ক্লাস লেভেলের নিচের কোন কাজ আপনার হোমে হয়ত আসে না এবং সেই কাজগুলিকে আপনার স্কিল দিয়ে ইন্টারপ্রেট করাই দুষ্কর-এক্সিকিউশন তো দূরে থাক। শুরুতে ভিজুয়াল লাইব্রেরী তে তাই সহজ ধরনের কাজ দিয়ে বিল্ড আপ করুন-যেটা দেখলে মনে হবে বাহ-এটা তো মনে হয় একে ফেলতে পারব।

একই সাথে আকার শুরুতে কিছু বেসিক জানতেই হবে। প্রথমে ফর্ম আর শেপ এগুলি বোঝা জরুরী। তারপরে একটার সাথে আর একটা ফর্ম জোড়া লাগিয়ে হিউম্যান ফিগার। সাথে ফিগার ড্রয়িং এর জেশচার। এরপর তিনটে মিলিয়ে কিছু ক্যারেক্টার ডিজাইনিং। হিউম্যান ফিগার আকার কারন আসলে যেহেতু এটা আমাদের সবার চেনা আর এখানে অনেক রকম ফর্ম পাশাপাশি মিলে থাকে তাই এটা একটা ভাল স্টার্টিং পয়েন্ট ড্রয়িং শিখতে।   খুব ছোট ছোট ভাবে জিনিসগুলিকে ভেঙ্গে নিয়ে একটা একটা করে শেখা-আর তার পাশা পাশি এপ্লাই করা। অনেক থিওরি জেনে এপ্লাই করতে গেলে শেখা হয় কম বরং অল্প শিখে সেটা দিয়েই কাজে লাগিয়ে কিছু করা গেলে সেটা মাথায় থাকে আরো ভাল।

ড্রয়িং এর বেসিক টপিক গুলি শিখতে অনেক সময় বোরিং লাগে কারন কেউ আমরা শুধু ফর্ম আকতে পছন্দ করি না, শুধু কম্পোজিশন করতে পছন্দ করি না, শুধু গোলক নিইয়ে শেডিং করতে পছন্দ করি না। আকতে পছন্দ গাছপালা, পথঘাট, নেচারাল বিউটি। তাহলে ক্যারেক্টার ডিজাইনের প্রিন্সিপাল শিখে সেই রুল গুলিকে গাছের শেপ সিমপ্লিফাই করতে কাজে লাগান। লাইট শ্যাডো কালার থিওরি নিয়ে সেগুলি এনভায়রনমেন্ট আর্টে কাজে লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন শীখবেন অল্প-সেটাকে যত খানি সম্ভব কাজে লাগাবেন প্র্যাকটিস আর্ট ওয়ার্কে। একসাথে অনেক কিছু শিখে সেটাকে কাজে লাগান সম্ভব হয় না কখনো। ক্লাস ওয়ান এর কাউকে এস এস সি এর সিলেবাস দিয়ে দিলে সে কিন্তু পড়ে এ প্লাস পেতে পারেনা। এক্টূ একটু করে ধাপে ধাপে শিখতে শিখতে আগাতে হবে।  

 লাইভে স্কেচবুকিং, নেচার গাছপালা এবং কম্পোজিশন প্র্যাকটিস করতে পারেন। সব থেকে ভাল আসলে একটা বই বা টিউটোরিয়াল সিরিজ ফলো করে সেটাকে কম্পলিট করা। আগেই বলেছি- একেবারে শুরুতে ডিজিটাল আকান, কালারিং এই দুটোকে একেবারে মাথায় না নেয়াই ভাল। ঠেকে শিখেছি তাই বলতে পারি যে অনেক দিন ধরে টানা হ্যাচড়া কালারিং এসব করার পর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি যে সলিড ড্রয়িং টা কতটা জরুরী। আমার কথা মেনে নেবার কোন দরকার নেই কিন্তু যদি আকতে আকতে মনে হয় যে কোথায় যেন একটা কিছু হচ্ছে না, তখন ড্রয়িং টাকে ঝালিয়ে নিবেন মনে করে। 

আর একটা খুব ইম্পরট্যান্ট ভাষা শিক্ষার মডেল হচ্ছে Acculturation-এটার মানে হচ্ছে আপনি যেই ভাষা টা শিখতে যাচ্ছেন, সেই ভাষা ভাষী দের সাথে আপনার সম্পর্ক। একবার মিউজিক শিখতে যেয়ে পড়েছিলাম সংগীত একটি গুরুমুখী বিদ্যা। ছবি আকাও আমার মনে হয় অনেক সময় এরকম। কোন আর্টিস্ট এর পাশে বসে আপনি যদি কাজ করা দেখেন এমন কিছু টিপস ট্রিক্স দেখতে পাবেন যেগুলো হয়ত কথায় লিখে বুঝান সম্ভব না কিন্তু সহজাত ভাবে কাজ করার সময় আর্টিস্টের হাতে চলে আসে।

তবে এর বিপরীতটাও সত্য-যদি আপনি সব সময় অনেক হাই স্কিলের আর্টিস্ট দের কাজ দেখেন তাহলে আপনার স্কিল লেভেলে কোন কাজ এক্সিকিউট করতে হয়ত জড়তা বোধ করবেন। তাদের সামনে আপনার নিজের কাজ গুলি মনে হবে তুচ্ছ এবং সেই ভয় থেকে আকা হবে কম। ফেসবুকের প্রো আর্টিস্ট গ্রুপে ঢুকলেন-সবার কাজ দেখে হতাশ হয়ে গেলেন-কালচারালি সেই গ্রুপে আপনি খাপ খাওয়াতে পারলেন না। এরকম হয়ে আকা ছেড়ে দেয়-অনেকেই কিন্তু আছে। খুব ভাল হয় যদি আপনি নিজের থেকে একটু হাই স্কিলের কোন আর্টিস্টের কাছ থেকে শিখতে পারেন-তাহলে আপনার প্রবলেম গুলি তার কাছে অনেক রিলেটেবল থাকবএ এবং তার কাছে আপনার কাজের এক্সেপটেন্স থাকবে বেশি।

এর সাথে আর একটা রিস্ক থেকে যায় যেটাকে বলে Pidginization-অর্থাৎ আপনার আকার গ্রোথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাইয়ার স্কিলের আর্টে এক্সেস না থাকার কারনে বা সেই চ্যালেঞ্জ না নেবার কারনে। তাই যখন বুঝতে পারবেন একটা লেভেলে কম্ফোর্টেবলি আকতে পারছেন তখন ই উচিত নতুন একটু হাই স্কিল চ্যলেঞ্জে ট্রাই করা এবং নিজের আগের লেভেলের সাথে ক্রমাগত প্রতিযোগিতা করে যাওয়া।  শেখার কোন শেষ নেই ছবির জগতে,তাই হচ্ছে না কিছু এ কথা ভাববেন না। যার আকা দেখে আপনি কপাল চাপড়াচ্ছেন, সেই আর্টিস্ট তার জায়গা থেকে আর একজনের কাজ দেখে হয়ত হাত কামড়াচ্ছে। সেলফ ক্রিটিক হওয়া জরুরী। সেলফ ক্রিটিসাইজ করার জন্য অন্য কারো আকা স্টাডি করুন, ফিল্ম স্টিল স্টাডী করুন। নিজে দেখুন রেফারেন্স কাজটার থেকে আপনার কাজটা কেন আলাদা হচ্ছে-কোথায় ভুল হচ্ছে। একটা ছবি দেখে দেখে আকেন, তারপরে ট্রেস করে আকেন, হুবুহু কালার পিক করে পেইন্টিং করেন, নিজে দেখে দেখে কালার বিল্ড আপ করেন-এই ধরনের স্টাডি প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেলেই ধীরে ধীরে বিষয়গুলি আয়ত্মে আসবে।

অনেক কিছুই মনে হয় পারি, পারি-কিন্তু কি যেন হচ্ছে না। আবার সেটার দিকে মন দিলে আর একটা দিক যেন ফসকে যাচ্ছে। এমন ভাবেই ঠেকে শিখে এগুতে হয় ছবি আকা শিখতে। এখানে দরকার আসলে ছবি আকার প্রতি ভালবাসা। আকার কাজটাকেই ভালবাসতে হয়-পেন্সিল নিয়ে দাগা দাগি, পাতার কোনায় ছোট্ট করে আকা একটা মুখ, খাতার পিছে পেনের দাগে কমিক, কাল ক্ষন খুৎ পিপাসা ভুলে একটা সাদা কাগজে আচড় কেতে যাওয়া-এই বিষয়গুলি যদি ভাল না লাগে তাহলে আকা শেখা অনেক জটীল। অসম্ভব বলছি না কারন অনেক ভাবেই ছবি তৈরী করা যায়-খাতা কলম কে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ন আর একভাবে কেউ তার আর্টিস্ট সত্ত্বা কে পূর্নতা দিতে পারেন সেই আলাপে আমি যাচ্ছি না। 

আর একটা বিষয়ে প্রায়ই আমি ভাবতাম কোন স্টাইলে আঁকব? কোন স্টাইলে শিখব? স্টাইল বিষয়টাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী একঝন আর না আমি-১০-১২ বছর আকার পরে কারো একটা স্টাইল দাঁড়ায়। ১ মাসের ছবি আকার মাথায় দাঁড়িয়ে তাই স্টাইল, আর্ট পেজ, এসব নিয়ে মাথা ঘামান অর্থহীন। ১ মাস ছবি একে রাতা রাতি ভাইরাল সাকসেস হওয়ার স্টোরি থাকতে পারে-কিন্তু যদি আপনার মনে থাকে আকার টেকনিকাল এবং ভিজুয়াল কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তা তাহলে লেগে থাকতে হবে। ভাইরাল হয়ত হতেও পারেন নাও পারেন-কিন্তু বেশ একটা লম্বা সময় রেগুলার না আকলে আর্ট স্কিল ইম্প্ররুভ করা কঠিন।

অনেক রকম কাজ দেখে হতাশ না হয়ে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য টুকু নিয়ে নিজের ভাল লাগার কাজে লাগাতে পারেন। এটা একটা খুব বড় শিক্ষা যেটা আমি নিজে এখন এসে কিছুটা রিয়ালাইজ করতে পারি। অনেক অনেক বিশাল একটা জগত আকার যেখানে আপনার ভাল লাগার জায়গাটা খুজে আপনাকে জগতে ঢোকার দরজাটা খুলতে হবে। তারপর জগতের যতটুকু ইচ্ছা ঘুরতে পারবেন কিন্তু সব দরজায় নক করে করে ফিরলে অনেক খানি সময় কেটে যাবে কিন্তু দেখা হবে না।  তাই চলতে থাকুক আকা আকি।

মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১

জুনের শেষে লকডাউনে

খুলনায় বাড়ি এসেছিলাম কিছু কাজে কদিনের জন্য। কাজ হলেও থমথমে একটা আবহাওয়া চারপাশে। পাচটার পরে দোকান হাট বন্ধ, রাস্তায় পুলিশের কড়াকড়ি, মাস্ক এটে হেটে বেড়ান-তার মধ্যে বর্ষা। তুমুল বর্ষা-দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে জল কাদায়। লকডাউন, করোনা, শিফটিং, হাজারো টেন শন মাথায় নিয়ে নিজের কাজ কিছু হয়নি। টুকটাক স্টাডি, থ্রিডি সফটওয়্যারে গুতো গুতি, আর স্ট্রেস রিলিফ পেইন্টিং। সব কিছু জড়ো করে ব্লগে দিয়ে রাখছি। অস্থির সময়ের স্বাক্ষর হয়ে থাকুক ছবিগুলো।

নিজের কমিকের কিছু ক্যারেক্টারের মধ্য দিয়ে স্টাডি এর কাজ গুলো করছি ইদানিং-এটা বেশ কাজে দেয়। নিজের প্রজেকট টারও খানিকটা প্রগ্রেস হচ্ছে আবার পেইন্টিং স্টাডি ও হচ্ছে। আর ইদানিং থ্রীডি দারুন ভাবে স্টাডি তে কাজে দিচ্ছে। থ্রিডি শেখার জন্য তো বটেই-একই সাথে এনাটমি শিখতে থ্রিডি আসলে দারুন কাজের একটা জিনিস-সব দিক ঘুরিয়ে যখন দেখা যায় তখন মাসল গুলোর আগা-আর গোড়া- এটা বুঝতে খুব হেল্প হয়। আরো করতে থাকব এই স্টাডি গুলো-চলবে। 










রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

আঁকার হাতে খড়ি-পর্ব ১

একটা খুব কমন প্রশ্ন-ভাই, আপনি কিভাবে আকেন? কিভাবে আকা শিখলেন? আমি কিভাবে আকা শিখব?

আমার মত কিভাবে আকি? আমার মত করে আকান মানে কি?আমার মত করে আকা কি শেখা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব- ডিজনি তে চাকরি পাওয়া আর্টিস্ট দের ডিজনি স্টাইল ধরে ধরে শেখান হয় যাতে সবার আকার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে। সে তো কাজের জন্য শিখে আকা। তার পেছনে অনেক পরিশ্রম আর এনালাইসিস আছে যাতে স্টাইল টাকে তার মূল পয়েন্টে ভেঙ্গে শেখান যায় সবাইকে। 

তবে আমি আমার স্টাইলকে ভেঙ্গে চুরে অমন একটা সিলেবাস ধরে শেখানোর মত করে ভাবিনি। সেটা পুরোপুরি শিক্ষামূলক প্রজেক্ট-সেকাজে সময় দেয়ার মত এক্সপার্টিজ বা নিজের জ্ঞান নিয়ে অত খানি কনফিডেন্স আমার নেই। যে নতুন আকতে শিখছে তাকে আমার স্টাইলে আকতে শেখানোর কোন চেষ্টাও আমার নেই। স্টাইলে আকতে শেখার বিষয়টাও গোলমেলে। কারন আকার মূল যে বিষয়গুলি-ফর্ম, লাইন, শেপ, জেশচার, কম্পোজিশন, কালার, শেডিং-এসব না আলাদা আলাদা করে এপ্লাই করার উপায় নেই। সব কিছুই এক সাথে একটা ছবিতে কাজে লাগে। আলাদা আলাদা করে জিনিসগুলি শেখা বিরক্তিকর, কিন্তু আলাদা না শিখে আকতে আকতে শেখাও সময়সাপেক্ষ। তাহলে আঁকা শেখার প্রথম ধাপ কি? কোনটা ছেড়ে কোনটা শিখব? এত এত কিছু শিখতে হবে-কিভাবে একটা প্রসেসে এগুলি শিখব? কোথা থেকে শুরু করব? কাকে ফলো করব?

আকতে শেখার প্রসেস টা অনেকটা আমার মনে হয় ছোটবেলায় ভাষা শেখার মত। লিখতে শেখা আর কথা বলতে শেখা-দুটো কিন্তু সম্পূর্ন আলাদা বিষয়। আমরা বাংলা যেভাবে শিখি-তা কিন্তু কথা বলতে বলতে শেখা। ছোট বাচ্চারা শুনে শূনে কথা জোড়া লাগিয়ে অনেক কথা বোঝাতে পারে। ব্যাকরন, কথ্য, চলিত, সাধু, সমাস-এত শত বিষয় তার মাথায় রাখতে হয় না। কিন্তু এগুলো না শিখলে আবার শেখা টা কিন্তু পূর্নতা পায় না। বলতে বলতে বা শুনঅতে শুনতে যে শেখা , সেটি কিন্তু লিখিত রূপের শিক্ষা দেয় না। ভাষার নান্দনিকতার শিক্ষা দেয় না। কোন বাচ্চাকে চাইলে কবিতা মূখস্ত করে বলান যাবে কিন্তু সেই কবিতার ভাব বোঝার সামর্থ্য তার তখনো হবে না। তবে বাচ্চা দের কাছে কথা বলার মূল যে লক্ষ-অর্থাৎ কমিউনিকেশন, সেটার জন্য কিন্তু এত নিয়ম কানুন ডিঙ্গিয়ে কথা শুনা আর বলতে চেষ্টা করার কাজটাই মূখ্য। দুটি পাশা পাশি শিখতে শিখতেই ভাষার দক্ষতা অর্জন সম্ভব। আমরা অনেক সময় ইংরেজি যেভাবে শিখি-তাতে খাতা কলমে নিয়ম নীতি মেনে পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি-কিন্তু বলতে গেলে জড়োসড়ো হয়ে যাই। সাবলীল ভাবে বলার দক্ষতা অর্জন এর জন্য ইংরেজি শুনা বা আধো আধো বলতে চেষ্টা করার যে প্র্যাকটিস টা সেখানে একটা ফাক থেকে যাওয়ায় এই জড়তা টা কাটে না।  এখানে বলতে বলতে শেখা, শিখতে শিখতে এপ্লাই করা-এমন অনেক প্রসেসের একটা মিথস্ক্রিয়া এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। 

এখন এই প্রসেস টার সাথে চিন্তা করেন ছবি আকা শেখার প্রসেসটা। প্রচুর বিগিনার আর্টিস্ট, তারা ক্রমাগত জানতে চাচ্ছেন কিভাবে আকলেন, কোন সফটওয়ারে আকলেন, কোন ট্যাবে আকলেন, কতক্ষন ধরে আকলেন, কোন ব্রাশ ব্যবহার করলেন-ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। টেকনিকাল এসব নানা প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার অবশ্যই-তবে এ উত্তর গুলি জানা ছবি আকা শেখার পথের অনেক অনেক দূরের ধাপ। ধরুন আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে চান, ফ্রেঞ্চ একজন রাইটার কোন কলমে লিখছেন সেই প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন থাকতে পারে-কিন্তু সেই ব্রাণ্ডের কলম কিনলে তা দিয়ে ফ্রেঞ্চ লেখা বের হবে এই চিন্তা হাস্যকর। ছবি যারা আকছেন, বিগিনার স্টেজে আছেন, প্রথমে এই বিষয়টা মেনে নেওয়া জরুরী। আপনার হাতের কাছে ইউটিউব, আর্টস্টেশন, ছবির ব্যাকরন নখদর্পনে, ড্রয়িং ট্যাব আর পিসির স্পেক ঠোটের ডগায়, ফোনের স্ক্রিনে ড্রয়িং এর এপ -এত অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিজেকে বিগিনার ভাবাটা কঠিন। কিন্তু এটাই শুরুর ধাপ। নিজেকে কল্পনা করুন ভাষা শিখতে বসেছেন- সব কিছু দূরে সরিয়ে জরুরী ঐ আধো আধো কথা বলে কিছু বুঝাতে শেখা। হ্যা, আপনি যদি একটা কবিতা মুখসত করে স্কুলের ফাংশনে বলেন, লোকে হাততালি দিবে, বাহবা দিবে, বাচ্চাদের যেমন উতসাহ দেয়। কিন্তু সেই বাচ্চাকে এজেন্সি অফিসে কপিরাইটিং এ বসিয়ে বলুন-দারুন কবিতা পার তুমি-লিখে ফেল ঝট পট তাহলে দু তিনটে-কাজ হবে?

মিমিক্রি না-বিষয়গুলিকে আত্মস্থ করার একটা প্রক্রিয়া এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় সবাইকে। একটা সত্য ঘটনা বলি। মোটীভেশনাল গল্প বলা যেতে পারে-তবে গল্পের স্থান, কাল, পাত্র-কিছুই খেয়াল নেই। এক ঘোড়া নাকি অংক করতে শিখেছে। সাধারন অংক-এক অংকের সংখ্যার যোগ বিয়োগ ধরনের। তাজ্জব ব্যাপার। সাজানো বলা যায় না কারন ঘোড়ার মালিক সজ্জন ব্যাক্তি-সত্যিই তার বিশ্বাস তার ঘোড়া অংক করতে পারে। কিভাবে করে অংক? একটা হোয়াইট বোর্ডে লেখা হয় দুটো সংখ্যার মাঝে যোগ চিহ্ন দিয়ে-তারপর ঘোড়া যোগফলের সমান সংখ্যক বার খুর ঠুকে। ঘোড়ার মালিকের কোন কারসাজি নেই-অনেকেই নিজেদের মত করে প্রশ্ন লিখে দিয়েছে-ঘোড়া ঠিক ঠিক খুর ঠুকে সঠিক উত্তর দেয়। পরে যখন এই দাবী নিয়ে পরীক্ষা চালান হল সবাই অবাক। ঘোড়ার মালিক আসলেও নির্দোষ। তার ঘোড়া অংক না পারলেও মানুষের এক্সপ্রেশন পড়তে ছিল তুখোড় দক্ষ। ঘটনাটা ঘটেছিল এমন যে, প্রশ্ন টা লিখে সামনে একজন দাঁড়িয়ে থাকত ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে। ঘোড়া বুঝে ফেলেছিল এমন ভাবে তাকালে তাকে খুর ঠুকতে হবে। সঠিক সংখ্যক বার খুর ঠুকার আগ পর্যন্ত প্রশ্নকর্তার চোখে একরকম প্রশ্নের এক্সপ্রেশন থাকত-ঘোড়া যদি যোগফলের সমান খুর ঠুকত তখন এক্সপ্রেশন পালটে একটা অবাক বা বিস্ময়ের এক্সপ্রেশন চলে আসত। এ সময় ঘোড়া বুঝেছিল খুর ঠোকা থামিয়ে দিতে হবে। এভাবে উত্তর ঠিক দিত বটে ঘোড়া কিন্তু যোগফলের নিয়ম কানুন সব ডিংগিয়ে। পাবলিক রিএকশন এনালাইজ করে অনেক বাহবা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেই ঘোড়াকে দিয়ে দোকানে হিসাবের কাজ চলবে না।

তাহলে কিভাবে শিখব? 

সবার আগে ভাবুন ছবি আকা শিখতে আপনার উদ্যেশ্য কি আসলে? পেজ খুলে ফেমাস হওয়া নাকি নিজের মত আকতে শেখা , বোরডম কাটান,  প্রফেশনালি স্টূডিও জব করা, এনিমেট করে গল্প বলা, নিজের মত ক্যারেক্টার আকতে শেখা, নাকি ফ্রিল্যান্স কাজ করার জন্য ছবি আকা শেখা। এই অবজেকটিভ মাথায় থাকাটা খুব জরূরী। তাহলে সেই ভাবে নিজের রিসার্চ, বা স্টাডি এলিমেন্ট গুলিকে সিরিয়ালি সাজিয়ে নিতে পারবেন। হয়ত আপনার ইচ্ছা খুব সিমপ্লি কমিক স্ট্রীপ আকান। আপনি আর্ট স্টেশনের রিয়ালিস্টিক গেম ক্যারেক্টার দেখে স্টাডি করতে থাকছেন। আপনি শখের বশে জলরং এ ফুল ফল আকতে চান-আপনাকে কঠিন কম্পোজিশন আর কালার থিওরী এর বই গুলে খাওয়ান নিস্ফল। এজন্য যেটাতে মজা পান সেটা দিয়েই স্টাডি চালান জরুরী। 

তারপর? খুব সহজ- এতই সহজ যে সেটা চিন্তা করাটা কঠিন।

শেখার প্রথম ধাপ আকতে শুরু করুন। যেমন পারেন, যতটুকু পারেন। বাচ্চারা আধো আধো বোলের জন্য বাহবা পায়-বড়োরা আধো আধো বোলের জন্য পায় সমবেদনা। কিন্তু এতে দমে যেয়েন না। আপনার আকা শুরুতে কিছুই হবে না, তুখোড় আর টি এক্স গ্রাফিক্স কার্ড লাগান পিসিতেই হোক, আর পাচ টাকা কলমে বিশ টাকার খাতাতেই হোক-হাতে খড়ি পর্যায়ে এই স্ট্রাগল টাই মূল-শুরু করা। বলতে যত সহজ-করতে তত সহজ নয়। নিজের কাছে কাজটাকে এনজয় করতে শিখুন-কালিতে, তুলিতে, জল রঙ পেন্সিলে প্রতিদিন কিছু না কিছু আকুন। ৩০ দিনে একটা খাতা ভরাট করতে পারেন কিনা চ্যালেঞ্জ টা নিয়েই দেখুন না। কোন একটা কাজকে অভ্যাসে পরিনত করটা কঠিন-কিন্তু করতে পারলে তার ফল সুদূর প্রসারী। তাই আকাস কুসুম কল্পনা র রাশ টেনে ধরে, আর হচ্ছেনা হবেনা পারবনা লোকে হাসবে, আমার টা কেন অমন হচ্ছে না, এসব চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রেখে একবার খাতা কলম নিয়ে বসেন। আকুন যা ইচ্ছে যেমন ভাবে ইচ্ছে। চিন্তা করুন আপনি কথা বলতে শিখছেন-কেউ আশা করেনা আপনি কালকেই সাবলীল ভাষন দিবেন মানুষের সামনে-তবে একদিন সেই মঞ্চে দাড়াতে চাইলে আপনাকে প্রথম স্টেপ টা নিতেই হবে। 

তাই চলতে থাকুক আকা আকি।

দ্বিতীয় পর্বঃ https://artsbyrats.blogspot.com/2021/06/blog-post_24.html


বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

জুন শেষ

 দেখতে দেখতে জুন শেষ হয়ে এল। নতুন একটা বছর দেখতে দেখতে পুরনো হয়ে এল। এক ঘেয়ে জীবনে সময় দ্রুত যায়। শেষ হয়ে এল। আর কটা দিন।

নানা ঝক্কি ঝামেলা পূর্ন দিন শুরু হতে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উতরাই এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে-তাও ভাল-যদি সময়ের গতিটাকে একটু ধীর করে দেয়া যায়?












মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১

খ্যাপ কাজ

 অনলাইন ফ্রিল্যান্সে করা বেশ কিছু কাজের ভলিউম জমে গেছে। ব্লগে দিয়ে রাখলাম কটা সেখান থেকে। 






মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১

ছবিতে স্মৃতি

হাবি জাবি ছবির বান্ডিলে আর এক তোড়া যুক্ত হল। এই ছবি গুলি বেশির ভাগ আকা ইদের ছুটিতে খুলনা যেয়ে। এক একটা ছবি আকতে অনেক সময় আমার মনে হয় মেমরি সেল গুলি অন্যভাবে কাজ করে। কোন কোন ছবি আকার সময় আমি যদি কোন গান শুনি, বা পডকাস্ট শুনি-ঐ ছবি পরে দেখার সময়ে সেই গান গুলো মনে পড়ে। কোন কোন ছবির সাথে এভাবে জুড়ে যায় খেতে খেতে আকতে থাকা খাবার, ঝাঁঝালো দুপুরে ফ্যানের ঘটর ঘটর শব্দ, পাশের বাড়ি থেকে ক্রমাগত ডাকতে থাকা আদরের বিদেশী কুকুর। 


আমার মেমোরি খুব খারাপ। স্কুল কলেজ জীবনে কি কাটিয়েছি তার অনেক কিছুই আমার নিজের মনে নেই- অন্যদের কাছ থেকে শুনে শুনে আমার শৈশব রোমন্থন করতে হয়। এই ছবি গুলো যেন আমার ডায়েরি হয়ে থাকে। তাই আকতে থাকি, আকার মধ্যে ঐ টুকরো টুকরো মেমোরি গুলো থাকুক। খুব জরূরী কোন স্মৃতি না হোক, এক আর শূণ্যের বাইনারি অসীম কম্বিনেশনে লুকিয়ে থাক রাস্তায় হকারের আওয়াজ, মায়ের গাজরের হালুয়া, দুপুরের ঘাম আর টিক টিক ডাকতে থাকা দেয়ালের টিকটিকিটা।










শনিবার, ৮ মে, ২০২১

হাবি জাবি ছবির ভলিউম

 প্রতিদিনের ওয়ার্ম আপ স্কেচ, স্টাডি, পেইন্টিং এর কালেকশন।









সোমবার, ৩ মে, ২০২১

কম্ফোর্ট জোন

 কমফোর্ট ফুড বলে একটা খাবার আছে- যে খাবার নাকি খেতে হয় অসুস্থ হলে, বাংলায় বলে পথ্য। পাতলা মুরগির স্যুপ, মাগুর মাছের ঝোল, ডাবের পানি- চাইকি হতে পারে বাচ্চা মুরগির মাংস দিয়ে ভাত, শিং মাছের তরকারি, ঢ্যালঢ্যালা খিচুড়ি, বয়াম থেকে ঢেলে চেটে চেটে খাওয়া হরলিক্স-কার জন্য কোনটা কম্ফোর্ট ফুড বলা মুশকিল। প্যারা নাই চিল টাইমে তাই রিলাক্স সাবজেক্টে রিলাক্স ছবি আকা-চাপ নাই, নাই চাপ। পিন্টারেস্ট খুলে আকো যা ইচ্ছা। ড্রয়িং বেস ধরে পুরনো সেই কম্ফোর্ট জোনের গ্রাডিয়েন্ট আর ব্রাশে স্টাডি চালাচ্ছি কয়দিন।





বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১

সময় নেই

আঁকব-সময় নেই

পড়ব-সময় নেই

সিরিজ দেখব-সময় নেই

ঘুরতে যাব-সময় নেই

রান্না করব-সময় নেই

খাব-সময় নেই

ব্যায়াম করব-সময় নেই

এনিমে দেখব-সময় নেই

সময় কাটাব-সময় নেই

বাঁচব-সময় নেই

মরব-সময় নেই



শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

Concept art for my Webtoon Comic Shororipu

 ষড়রিপু কমিক টা নিয়ে অনেকদুর কাজ করে ফেলে রেখেছিলাম। করছি করব হবে হল করে করে ভাবলাম শুরু করেই দেওয়া যাক-ওয়েবটুন প্ল্যাটফর্মে সাপ্তাহিক কমিক হিসাবে আপলোড করতে শুরু করছি এপিসোড গুলি। দেখা যাক কতদুর যায়-কাহিনীটা  শেষ করতে পারলে ধরব একটা প্রজেক্ট কমপ্লিট হল!





বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১

art support with artsbyrats-Gesture study

 রিসেন্টলি গ্রুপে একটা মজার খেলা চালু হয়েছে ( সৌজন্যে রোমেল ফ্রস্ট ) যেখানে একটা ছবি দেওয়া হয় এবং সবাই সেটার জেশচার স্টাডী পোস্ট করে। ডেইলি প্র্যাকটিসের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সবার দারুন ইম্প্রুভমেন্ট আসছে-আমার নিজেরো অনেক কুইক আর ফ্লুয়েন্ট হচ্ছে জেশচার। এখন পর্যন্ত করা কাজগুলি ব্লগে দিয়ে রাখি।