শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্কেচবুকঃ কেন এবং কিভাবে?


স্কেচবুকিং নিয়ে আলোচনা করার আগে স্কেচবুকের ধারনাটা পরিষ্কার করে নেয়া জরুরী। স্কেচবুক বলতে আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছি এই লেখাতে? অনেকের একটা ধারনা আছে স্কেচবুক মানে একটা স্কেচ খাতা যেখানে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে তুখোড় কিছু ছবি আঁকা হয় যেগুলো একটা দারুন কালেকশান এবং নিজের সেরা কাজগুলির পোর্টফোলিও। এধনের স্কেচবুক যে হতে পারে না তা নয় তবে আমার লেখার বিষয় এগুলি নিয়ে না। যে ধরনের স্কেচবুক নিয়ে কথা বলব সেগুলো দেখিয়ে হয়ত মজলিসে বাহবা কুড়ানো সম্ভব হবে না তবে নিজের ড্রয়িং, আইডিয়া এবং স্কিল ডেভেলপে দারুন কাজে দিবে।
সংক্ষেপে বললে স্কেচবুক হল একটা খাতা, ডায়রি, প্যাড বা যেকোন কিছু যেটা আপনি সব সময় সাথে রাখতে পারবেন এবং নিজের মনে যা চায় সেটা ধুপ ধাপ এঁকে রেখে দিতে পারবেন। এটাকে নিজস্ব নোটবুক বা রাফখাতা এর মত ভাবতে পারেন যেখানে আসলে আপনি প্ল্যানিং করছেন বা ফাইনাল কাজের আগে রাফ কপি দেখে নিচ্ছেন।
এবার আসি কেন স্কেচবুক করবেন এবং কি আঁকবেন স্কেচবুকে? সবাইকে সাধারনত যেটা সাজেশান দেই সেটা হল শুরুর দিকে স্কেচবুকে জেশচার আঁকতে। ঘরে বাইরে ক্লাসে বাসে দোকানে মার্কেটে রাস্তায় ফুটপাতে যখন যাকে যেভাবে পান জেশচারে বৈচিত্র গুলো ধরতে চেষ্টা করেন, বুঝতে চেষ্টা করেন এবং খাতায় ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। জেশচার স্টাডির শুরুতে যেটা মনে হত সেটা হল যে এই রাস্তা ঘাটে ঘুরে ফিরে জেশচার না এঁকে বাসায় বসে ফটো রেফারেন্স স্টাডি করেই তো হাজারটা জেশচার আঁকতে পারি। তাহলে আর স্কেচবুক নিয়ে ঘোরা কেন? গুগল করে কি শত শত পোজ, জেশচার রেফারেন্স পাচ্ছিনা? উত্তরটা হল জ্বী-অবশ্যই পাওয়া সম্ভব। ডেডিকেটেড প্রচুর সাইট-ই আছে পোজ রেফারেন্স এর জন্য এবং সেই জেশচার গুলি স্টাডি করে করেই এক জীবন কাটায় দেয়া যায়। তবে এই লেখাতে আমি আরো দুইটা এসাম্পশান আগেই করে রেখেছি সেটা হল যিনি এই লেখাটা পড়ছেন-
০১। তিনি একজন বাংলাদেশি শিল্পী এবং
০২। তিনি বাংলাদেশকে আঁকতে চান।
এই দুটো জিনিস মাথায় রেখে এবার গুগল থেকে বাসার পাশের গলিতে ফেরত আসি। গলির মোড়ের চায়ের দোকান টার কথা চিন্তা করেন। যেতে আসতে নিশ্চয় আমরা হাজার বার দোকান টা দেখি-বসে চা বিস্কুট খাই-উজির নাজির মারি। কয়েকটা জিনিস ভেবে দেখা যাক-
০১। চায়ের দোকানে মামা কি দাঁড়ায় থাকে নাকি বসে থাকে? তার জেশচার টা কেমন?
০২। চা নাড়াবার বা কাপ ধোয়ার সময় হাত গুলো কিভাবে নড়ে?
০৩। আদা চা বানাতে আদা কাটা হয় কি দিয়ে এবং কিভাবে?
০৪। দোকানদার মামা দুধের কৌটা কাটে কেমনে? নাকি দুধ জ্বাল দেয়? কিভাবে সেটা?
০৫। দোকানে বেঞ্চ গুলা তো বেশ নিচু-এখানে বসে যারা চা খায় তাদের জেশচার টা কেমন? দোকানে সিগারেট নিয়ে দড়িতে ঝুলতে থাকা লাইটার থেকে আগুন নেয়ার জেশচার টা-ই বা কী?
এই সব প্রশ্ন গুলো আসবে আপনি যদি বাসায় বসে একটা চায়ের দোকানের দৃশ্য আঁকতে যান। রেফারেন্স পাবেন কই?
এবার ভেবে দেখেন এভাবে কত কিছু আছে আমাদের চারিদিকে যেগুলো আমাদের একদম নিজস্ব কিন্তু রেফারেন্স সেভাবে নেই। আমাদের মুদি দোকান, কাচা বাজার, ইটের ভাটা, অফিস পাড়া, ভাতের হোটেল, শিশু পার্ক, পুলিশ ফাঁড়ি, রিকশা স্ট্যান্ড ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য জিনিস বাইরের থেকে একদম আলদা কিন্তু আমরা আঁকতে গেলে আটকে যাই-রেফারেন্স খুজি গুগলে। ক্রমাগত গুগলে হাতড়ালেও আপনি সব রেফারেন্স পেয়ে যাবেন কি না বলা শক্ত। আবার পেলেও এই জিনিসগুলোর রেফারেন্স দেখে দেখে আঁকা মুশকিল যেহেতু কেউ আগে আঁকে নাই। গুগল করে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি হয়ত এঁকে ফেলতে পারব কিন্তু রাজু ভাস্কর্য আঁকতে গেলে আমরা আটকে যাব। ডেইলি প্লানেট এর অফিস হয়ত চিনি কিন্তু রামপুরা টিভি সেন্টার কোনদিন এঁকে দেখিনি। এজন্যই স্কেচবুক করতে থাকা দরকার-আঁকতে থাকলে দেখবেন এঁকে কুলিয়ে উঠতে পারতেছেন না। আশ পাশে হাজার টা জিনিস চোখে পড়বে যেগুলো আগে দেখেন নাই-ছোট খাট অনেক এলিমেন্ট খুঁজে পাবেন যেটা খুব সাধারন কিন্তু ড্রয়িং এ ডিফারেন্স তৈরী করে দিবে। আমাদের চারপাশ আসলে আমাদের নিজেদের মত করেই আঁকা শিখতে হবে আর তার জন্য স্কেচবুকিং করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
(এখানে একটু বলে রাখি অনেকে ভাবে আমাদের আশ পাশ এঁকে বুঝি ডিজাইন বা ভিজুয়াল তৈরী করা সম্ভব না তাদের কে বলব Jamie Hewlette Bangladesh লিখে একটু গুগলে নিতে)
এবার শেষ পয়েন্টে আসি যে কিভাবে করব স্কেচবুকিং। আমি নিজে স্কেচবুকিং করি খুব বেশি দিন না এবং বিষদ আকারে বলার মত কোন অবস্থানেও নাই তারপরেও যতটুকু বুঝি সেটা বলে রাখি।
স্কেচবুকে মনে রাখবেন যেটা সেটা হল এটা রাফ কাজ। জেশচার দেখতে যে খুব সুন্দর হবে বা কমপ্লিট করতে হবে এমন কিছু নেই। কুইক জেশচার সঠিক ভাবে ধরতে পারাটাই মুখ্য। জেশচার আঁকতে আঁকতে অভ্যস্ত হয়ে আসলে সাথে ড্রেস-আপ, চুলের স্টাইল, এক্সেসরিস এগুলোর সাজেশান ও নিয়ে রাখতে পারেন। আর একটা গুরুত্মপূর্ন জিনিস স্কেচবুকিং এ সেটা হল টেক্সচার। আশপাশের টেক্সচার সাজেশান, গাছপালার পাতার প্যাটার্ন, জামার ডিজাইন এগুলো ও স্কেচবুকে টুকে রাখতে পারেন। একই সাথে করতে পারেন আশপাশ স্টাডি-আশ পাশ স্টাডি বলতে বুঝাচ্ছি চায়ের দোকানের টেবিলটা, গাছে ঝুলতে থাকা সাইনবোর্ডটা, কুন্ডুলি পাকানো তারের জালি টা, ট্রাফিক পুলিসের পুলিশ বক্সটা ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসের নোট। এভাবে স্কেচবুক করতে থাকলে আস্তে আস্তে দেখবেন আপনার ড্রয়িং এ আপনার অজান্তেই অনেক নতুন নতুন জিনিস চলে আসছে যেগুলো ড্রয়িং এর মনোটনি ভেঙ্গে দিচ্ছে আর তৈরী করছে নতুন কিছু!
আর কথা না বাড়াই-স্কেচবুকিং নিয়ে বক বক করে আসলে কাউকে এর মজাটা বুঝানো সম্ভব না। তার চে একদিন খাতা কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়েই দেখুন না-বাসার সামনের রাস্তাটাই দেখবেন তখন কত ইন্টারেস্টিং!

মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্টাইল



কয়েকদিন ধরে আমাদের আকান্তিস গ্রুপে আলোচনা চলছে স্টাইল নিয়ে। আমি নিজেও স্টাইল নিয়ে যথেষ্ট কনফিউজড ছিলাম এবং আছি এখনো। তারপরেও যতটুকু নিজে চিন্তা ভাবনা করে এবং মেহেদি ভাই এর সাথে কথাবার্তা বলে বুঝলাম সেটা শেয়ার করার চেষ্টা।
প্রথমে বলি স্টাইল আসলে কি? স্টাইল আমার মতে আঁকার ধরন-এক এক জনের হাতের লেখা যেমন এক এক রকম সেভাবে আঁকার ধরনেও এক জনের সাথে আর এক জনের পার্থক্য থাকবে। এটাই স্টাইল। এখন একটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার যে স্টাইল কোন ভাবেই বেসিক ড্রয়িংকে পাশ কাটিয়ে শর্টকাটে কিছু করা নয়। একদম সিম্পল স্টাইলে ড্রয়িং এর যেই বেসিক, একদম রেয়ালিস্টিক স্টাইলেও সেই একই বেসিক থাকতে হবে। (যদি না আপনি থ্রিডি বাদ দিয়ে টুডিতে আকতে যান-এটা নিয়ে এখানে আলোচনায় না যাই। আগ্রহ থাকলে নিও রেট্রো স্টাইল নিয়ে গুগলে দেখতে পারেন) ড্রয়িং এর বেসিক বলতে আমি বুঝি ফর্ম ঠিক থাকা, ফোরশর্টেনিং ঠিক থাকা, কন্সট্রাকশন সহজ এবং ক্লিয়ার থাকা, জেশচার যতদুর পারা যায় ফলো করা-এইগুলা। লেখার সময় আমি যেমন যত প্যাচ গোচ দিয়েই লিখি না কেন “ক” যদি দেখে “ক” বলে চেনা না যায় আর কেউ যদি পড়তে না পারে তাহলে লেখার মানে দাঁড়ায় না। সেভাবে ড্রয়িং এর হাজার কেরদানি দেখায় লাভ নাই যদি সেটা রিডেবল না হয়।
তাহলে স্টাইলের সাথে ড্রয়িং এর কোন বিরোধ নেই এটা মাথায় রেখেই আমরা এগুই। এবার আসি স্টাইলে ডেভেলপ হবে কিভাবে সেটা নিয়েপ্রথমত নিজের স্টাইল তৈরী করতে হলে প্রচুর আঁকতে হবে এবং আঁকতে হবে কনফিডেন্সের সাথে। তাহলে প্রচুর যদি আঁকতেই হয় সেক্ষেত্রে তেমন ভাবেই আঁকা ভাল যেটাতে আপনি আরাম পান এবং স্ট্রেস না পড়ে কাজেএই কাজটা অনেক দিন ভুল ভাবে করতাম-মানে কোন আর্টিস্ট এর কাজ ভাল লাগলে তার ড্রয়িং থেকে স্টাইল টা নিজের আঁকায় কপি করতে চেষ্টা করতাম। ফলে কাজ ও শেষ হত না, সময় ও লাগত শুধু শুধু এবং শেষ মেষ নিজের মন মত কিছুই হচ্ছিল না। এখন ভাবতেছি এর থেকে নিজের স্টাইলে কিভাবে নতুন কিছু যোগ বিয়োগ করে আরো ডেভেলপ করা যায় সেটা চিন্তা করাই বেটার। তাহলে আঁকাও যায় আরামে এবং “কেন ওরকম হচ্ছে না”-এই প্রেশার থেকেও নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

মোদ্দা কথা তাহলে যা দাঁড়াল সেটা হল-যেভাবে এঁকে আরাম পান সেভাবে এঁকে যান। খালি মাথায় রাখেন কি আঁকতেছেন, আর একজন সেটা কিভাবে আঁকতেছে এবং কিভাবে আপনার স্টাইলে সেটা
Incorporate করা যায়। আর একই সাথে নিজের স্টাইলে কনফিডেন্টলি আঁকার জন্য ড্রয়িং প্র্যাকটিস চালায় যাওয়া-এইটুকুই আমার এখন পর্যন্ত আন্ডারস্ট্যান্ডিং। সবাইকে ধন্যবাদ!