যখন ছবি আঁকা আঁকি শুরু করি-প্রথম দিকে ডিজিটাল আর্টের সব থেকে রহস্যজনক ব্যাপার মনে হত কালার। কিভাবে ছবিতে রঙ করে এটা ধরতেই অনেক দিন সময় লাগছে। কালারিং প্রসেস নিয়ে এখনো বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চলছে চলবে তার মধ্যে কালারিং এ কিছু প্রসেস খুটিনাটি টিপস শেয়ার করতে ব্লগ।
দেবার পর যেই অবস্থা দাঁড়াল ছবিতে সেটা এমন
রেফারেন্স ফটো থেকে কালার বা লাইট হুবহু নিয়ে আকতে চেষ্টা করলে অনেক সময় ছবি অতিরিক্ত জটিল হয়ে যায়। এজন্য এভাবে ধাপে ধাপে লাইট বুঝে নিয়ে কালার করলে অনেক সহজে এবং ইলাস্ট্রেশনের সাথে মানানসই লাইট শেড করা সম্ভব। আমি নিজেও শিখতে শিখতে এগুচ্ছি। দেখা যাক এই প্রসেসটা কতটা কাজে দেয়।
আঁকান্তিসে পোস্ট করা মিশুর একটা ছবি দেখে এই টিউটোরিয়াল লেখার শুরু।
ছবিতে কালার দেখে অনেক জায়গায় অনেক কাজ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তূ একটু খাপছাড়া ভাবে। লাইটের ডিরেকশান টা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যাচ্ছে না এবং রিফ্লেক্টেড লাইটের কাজ ফর্ম কে ফলো করে নাই।
রোদেলা আলো বুঝাতে একটা প্রসেস এ ইদানিং কালার করছি সেটা ভাবলাম এই ছবিতে ট্রাই করে দেখি। প্রথমে ইংকে ছবিটা ড্রয়িং।
এবার ছবি এর বিভিন্ন এলিমেন্ট এ কালার দিলাম।
কিছু জায়গায় এবার হিউ ভ্যারিয়েশান আনলাম। এটার সাথে লাইট শেডের সম্পর্ক নাই। এটা ফ্ল্যাট কালারের মনোটনি টা একটু ভাংবে। যেমন নাকের বা গালের লালচে ভাব, দাড়ির কাছের ডিস্যাচুরেটেড কালার, প্যান্টে ফেড ভাব ইত্যাদি।
এবার লাইট এর ডিরেকশান আর ফর্ম গুলা কেমন একটু বুঝে নেই।
ফর্ম গুলো রাউন্ডেড এবং ঘুরে ঘুরে গেছে সাইড এ যেয়ে। লাইট ডিরেকশান অনুযায়ী কোথাও কোথাও লাইট বাড়ি খাবে-আর কোথাও কোথাও খাবেনা। এভাবেই পুরো ছবিতে লাইট শেড তৈরী হবে। যেখানে যেখানে লাইট একেবারেই যাবেনা সে জায়গাগুলায় সব থেকে ডার্ক শ্যাডো তৈরী হবে। এই জায়গা গুলা সাধারনত ওভারল্যাপিং জায়গা গুলোতে হয়। যেমন এই ছবিতে সাবজেক্টের বাম হাত এর নিচে একটা ডার্ক শ্যাডো আসবে কারন ওখানে ফর্ম এর ওভার ল্যাপ হচ্ছে। আবার বাম হাতের নিচের অংশে কিন্তু অনেক ডার্ক শ্যাডো আসবে না কারন ওখানে ডিরেক্ট উপরের লাইট না আসলেও আশ পাশ থেকে রিফ্লেক্টেড লাইট চলে আসে।
যাই হোক এরপর যেটা করি সেটা হল পুরো ছবিতে একটা হালকা নিলচে কালার দিয়ে মাল্টিপ্লাই করে দেই।
এবার যেটা করি সেটা হচ্ছে লাইট ডিরেকশান ধরে নিয়ে এই শ্যাডো লেয়ার এর কিছু কিছু অংশ মুছে দেই যেখানে যেখানে লাইট পড়ছে।
যেখানে যেখানে মুছে দিলাম এই জায়গা গুলা সিলেক্ট করে একটা নতুন লেয়ার নেই Hard Light মুডের। এবার সেই লেয়ারে হলুদ টাইপ একটা গরম রঙ এর গ্র্যাডিয়েন্ট দেই। (গ্রাডিয়েন্ট অপাসিটি একটু কম রাখলাম-২৫-৩০%। দরকার পড়লে দুই তিনবার করে টান দিলাম।)
এখন একটা বুঝা যাচ্ছে যে উপরে কোনা থেকে লাইট আসছে। এবার এই লাইট টাকে আরো রোদেলা ভাব আনতে একদম উপরে (লাইন আর্ট লেয়ারের ও উপরে) আর একটা লেয়ার নেই। এটার মুড দেই Color Dodge । এই লেয়ারে এবার সফট একটা ব্রাশ নিয়ে যেই কালারের গ্রাডিয়েন্ট দিলাম তার থেকে স্যাচুরেটেড ডার্ক একটা কালার দিয়ে ব্রাশ করি। যেমন এই ছবিতে আমি গ্রাডিয়েন্ট কালার আর কালার ডজ লেয়ারের কালার দেখাই।
গ্রাডিয়েন্ট কালার |
কালার ডজ লেয়ারের ব্রাশের কালার |
দেবার পর যেই অবস্থা দাঁড়াল ছবিতে সেটা এমন
একটা গ্লো এর মত চক চকে ব্যাপার আসে এই কাজটা করলে। এরপরে কাস্ট শ্যাডো ( যেটা কিনা আগেই বললাম যেখানে যেখানে ফর্ম এর ওভারল্যাপ আছে সেখানে সেখানে সব থেকে ডার্ক শ্যাডো), রিফ্লেক্টেড লাইট ( এনভায়রনমেন্টে একটা কমন রিফ্লেক্টেড লাইট থাকে যেটা একদম টপ লাইট হিসাবে কাজ করে। সেটা হচ্ছে আকাশে রিফ্লেক্টেড নিলচে একটা আলো। তা ছাড়া যে এনভায়রনমেন্ট ভাবছি সেটার আশ পাশের জিনিস থেকে রিফ্লেক্টেড আলো সাবজেক্টের উপরে আসবে) ইত্যাদি ইত্যাদি যোগ করা যেতে পারে লাইট এন্ড শেডে।
রেফারেন্স ফটো থেকে কালার বা লাইট হুবহু নিয়ে আকতে চেষ্টা করলে অনেক সময় ছবি অতিরিক্ত জটিল হয়ে যায়। এজন্য এভাবে ধাপে ধাপে লাইট বুঝে নিয়ে কালার করলে অনেক সহজে এবং ইলাস্ট্রেশনের সাথে মানানসই লাইট শেড করা সম্ভব। আমি নিজেও শিখতে শিখতে এগুচ্ছি। দেখা যাক এই প্রসেসটা কতটা কাজে দেয়।