যেকোন রকম লেখালেখির কাজ আমার কাছে বেশ কষ্টের মনে হয়। শব্দের পর শব্দ বসিয়ে সংলাপ, গল্প, কাহিনী বা যেকোন কিছুই লিখতে বসলে দেখা যায় কী বোর্ড আর চলে না। একটা লাইন লিখি তো দুটো লাইন মুছি-এই ব্লগ পোস্টে তিন লাইন লিখতে যেয়েও কী বোর্ডের থেকে ব্যাক স্পেসে আঙ্গুল চলে যাচ্ছে বার বার। যাই হোক-সাহিত্য গুন না ভেবে যেটা লিখতে বসেছি সেটা লিখে ফেলি।
গল্পও উপন্যাস জাতীয় কিছু না লিখলেও প্রায়ই কমিকের জন্য স্ক্রিপ্ট বা গল্প বা আইডিয়া ভাবতে হয়। সব সময় সেগুলো একেবারে লিখে না ফেললেও দেখা যায় মনে মনে সংলাপের পরে সংলাপ বা গল্প আকারে সাজানোর কাজটা করা লাগে। তাই ভাবলাম এই গল্প লেখার পেছনের গল্প টা নিয়ে ব্লগে কিছু লেখা যাক। অবশ্য আমার চিন্তা করার ধরনকে আইডিয়াল বলে ধরে নেবার কোন কারন নেই। গল্প ভাবার পদ্ধতি সব সময়ই একজন থেকে আর একজনে ভিন্ন হবে। এই ব্লগটা কেবল ই আমার স্ট্রিপ আকারের আইডিয়া ভাবার সময় কিভাবে চিন্তা করি সেটা শেয়ার করবার জন্য।
প্রথম আলো গোল্লাছুটের জন্য প্রতি সপ্তাহে একটা করে জিতু এর স্ট্রিপ আঁকছি প্রায় বছর তিনেক ধরে। স্ট্রিপ এর আইডিয়া এর জন্য প্রথমে একটা কোন বিষয় ভেবে শুরু করি। যেমন এই স্ট্রিপ করার সময় ভাবনা ছিল ফিজেট স্পিনার।
আইডিয়া ঠিক করার পর এবার একটা ছোট গল্প সাজানো। স্ট্রিপের গল্প ভাবতে গেলে একেবারেই ছোট স্কেলে ভাবা দরকার কারন এখানে জায়গা খুবই লিমিটেড। আবার ক্রমশঃ লিখে গল্প চালিয়ে যাবার সুযোগ ও নেই। সেজন্য স্ট্রিপের গল্প হতে হবে খুবই ছোট। তাই গল্পটা ভাবলাম এমন যে-ফিজেট স্পিনার এর যে ফিচার গুলো সেগুলো নিয়ে কোন একটা প্যারোডি। হতে পারে ফিজেট স্পিনার যে কনসেনট্রেশান বাড়ায়-এই জিনিসটাকে উলটো ভাবে দেখান। স্ট্রিপের একটা পাঞ্চ লাইন থাকতে হবে এবং শেষ হতে হবে সেই পাঞ্চ টা দিয়ে। এই গল্পে পাঞ্চ হতে পারে ফিজেট স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে গল্পের ক্যারেক্টার রুমি ম্যানহোলে পড়ে গেল।
আইডিয়া ভাবলাম-এবার প্যানেলে ব্রেক ডাউনের পালা। এসময় সংলাপ নিয়ে ভাবতে শুরু করি। প্রথমে আমাকে গল্পের থিম এস্টাবলিশ করতে হবে। প্রথমে কি হতে পারে? দোকানে যেয়ে ফিজেট স্পিনার কিনবে? কারো থেকে ফিজেট স্পিনার ধার করবে? শেষ পাঞ্চ যদি হয় ফিজেট স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া সেক্ষেত্রে ফিজেট স্পিনার কি এবং কেন সেটা প্রথম ফ্রেমেই বলে ফেলতে হবে। সব থেকে সহজে এক ফ্রেমে শেষ করা যায় যদি ফিজেট স্পিনার কারো হাতে থাকে এবং তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে ফিজেট স্পিনার বিষয়ে।
এই স্ট্রিপটার মুল আইডিয়া যদি হয় একজন ফিজেট স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে ম্যানহোলে পড়ে গেল-তাহলে সেটা কিন্তু তিন ফ্রেমেই দেখান যায়। প্রথম ফ্রেমে ফিজেট স্পিনার কি বলা হল। পরের ফ্রেমে হয়ত দেখালাম স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে হাটছে। তৃতীয় ফ্রেমে পড়ে গেল। শেষ। কিন্তু এভাবে দেখালে স্ট্রিপের পাঞ্চ টা বুঝা যাবে না।
এজন্য যেটা করলাম ক্যারেক্টার দের দূর থেকে দেখালাম ফিজেট স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে হাটছে এবং একই সাথে ফিজেট স্পিনার এর কনসেনট্রেশান বাড়ানো যে গল্পটা সেটা সংলাপে বলে ফেললাম। এরপর আসবে স্ট্রিপের পাঞ্চ লাইন। সেটাকে ড্রামাটিক করার জন্য দরকার বিল্ড আপ।
ঝপাশ করে একটা আওয়াজ হল, জিতু ঘুরে তাকাল এবং দেখল রুমি ম্যানহোলে। এখানে তিনটা জিনিস কিন্তু এক ফ্রেমেই দেখান সম্ভব। যদি দেখান হয় জিতু চমকে যেয়ে ঘুরে তাকাচ্ছে এবং পাশে রুমি পড়ে আছে ম্যানহোলে তাহলে এক ছবিতে বিষয়গুলো এঁটে যায়। কিন্তু আমার কাছে সেটার থেকে এই ডিজাইন বেশি মজার মনে হয় কারন যখনই আমি কমিকে প্যানেল বাড়াচ্ছি তার মানে সেটা রিডারের কাছে পর পর সময় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। জিতু তার পিছে ঝপাশ শব্দ শুনে চমকাচ্ছে। এরপর সে ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছে। দুই প্যানেলে করার কারনে রিডার প্রথমে জিতুর সাথেই শব্দটা শূনছে। কিসের শব্দ এই কৌতুহল তার মধ্যে বাড়াবার জন্য আর এক প্যানেলে জিতুকে দিয়ে প্রশ্ন করান হচ্ছে এই কী হল? এর পর শেষ ফ্রেমে বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছে যে রুমি স্পিনার ঘুরাতে ঘুরাতে ম্যানহোলে পড়ে গেছে।
স্ট্রিপের গল্প ভাবার ধরনটা প্রায় সময়ই এ ধরনের। প্রথমে ছোট একটা কিছু ভেবে আইডিয়াটা লক করি। যেমন প্রথম ভাবনা হতে পারে-ফিজেট স্পিনার, প্রথম ভাবনা হতে পারে চকলেট, হোমওয়ার্ক, ফুটবল, গরমের ছুটি, ঈদের জামা এ ধরনের একটা শব্দ। সেই শব্দটাকে ঘিরে তারপরে মজার কোন আইডিয়া ভাবি। এরপর এক লাইনে একটা স্ক্রিপ্ট ভেবে সেটাকে এরপর প্যানেলে সাজিয়ে টাইম গ্যাপ কোথায় কত টুকু প্রয়োজন সেটা ঠিক করি। শেষ ফ্রেমটাকে ফিক্স করে তার আগের প্যানেল গুলো দিয়ে শেষ প্যানেলের জোকটাকে যতটা পারা যায় মজার করতে চেষ্টা করি।
আইডিয়া ভাবার এই প্রসেস কেবল স্ট্রিপ কমিকে না, কমিক পেজ করতে গেলেও এভাবে ভাবলে কিছু সুবিধা হয়-পেজ তাড়া তাড়ি লক করে ফেলা যায়। এই প্রসেসে অনেক সময় মনে হতে পারে স্বতঃস্ফর্ততা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে যেটা করে পর পর প্যানেল বা গল্প ভেবে লিখতে লিখতে আগাতে থাকে-সেটাও দারুন কাজ করে। আমার ক্ষেত্রে আগে পুরোটা ভেবে নিয়ে কাজ শুরু করলে সহজ হয়।
দুম করে এখানেই ব্লগর ব্লগর শেষ।