শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

স্কেচবুকিং

নিয়ম করে স্কেচবুকিং চলছে কার্টুন পিপল এর সাথে প্রতি শনিবারে। স্কেচবুকে এখন চেষ্টা করছি এনভায়রন্মেন্ট আর কম্পোজিশন নিয়ে স্টাডি চালাতে। স্কেচবুকের কিছু পাতা দিয়ে রাখি।








ইন্ডিয়া ভ্রমন-পর্ব ২

ইন্ডিয়া একবার ঘুরে আসার পর ভিসার মেয়াদ থাকতে থাকতে ভাবলাম আর একবার ঘুরে আসা যায়। এবারে ঘুরার প্ল্যান ছিল মা কে সাথে নিয়ে কোলকাতা আর দার্জিলিং। ৭ দিনের ট্যুরে ধীরে সুস্থে ঘুরে আসলাম মেঘে ঢাকা দার্জিলিং আর চড়া রোদের কোলকাতা। এবার স্কেচবুক নিয়ে ল্যান্ডস্কেপ স্টাডি করার একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেগুলো নিয়ে কিছু লিখে রাখি ব্লগে।




ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে যেয়ে আঁকা। ব্যাকগ্রাউন্ড এলিমেন্টে ফোকাস করতে চেষ্টা করেছি এখানে।




ব্যাকগ্রাউন্ড আকতে গেলে যেই সমস্যা টা হয় আমার ক্যানভাস সাইজটা অনুযায়ী ধরতে পারি না অনেক সময়। যেমন হয়ত একটা বিল্ডিং দেখে আঁকতে শুরু করলাম-কিন্তু কোথায় শেষ করব-বা কত গুলি এলিমেন্ট নিয়ে কম্পোজিশন করব সেটা ঠিক রাখতে পারি না। ফলে স্কেল বা পার্সপেকটিভ স্কেচে ঠিক মত ধরতে পারি না। এই জিনিসটা ঠিক করার জন্য এখন থেকে প্র্যাকটিস করছি একটা বক্স বা ফ্রেম একে নিয়ে ছোট স্কেলে ব্যাপার টা ধরার। আস্তে আস্তে বড় ফ্রেমে যাবার আগে এটা কাজে দিচ্ছে।




নিউ জলপাইগুড়ি যাবার জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে-পদাতিক এক্সপ্রেসের অপেক্ষায়।


দার্জিলিং পৌঁছে প্রথম দিন-যাবার পথটা ছিল দারুন-মেঘের উপরে খাড়া পাহাড়ি রাস্তা, একটু পর পর ইউ টার্ন, উনিশ বিশ হলেই পাশে খাদ-প্রায় ৪০ কিলো পাহাড়ি রাস্তার পর কার্শিয়াং, ঘুম পার হয়ে দার্জিলিং। মেঘ কুয়াশায় মাখা একটা শহর। উচু নিচু রাস্তা ঘাট, সাজানো পাহাড়ি বাসা, ছোট ছোট বাগান, খুপরি খুপরি রেস্টুরেন্ট-আর মার্চের তাতানো গরমের ভেতর হিম হিম ঠান্ডা আবহাওয়া। সব মিলিয়ে দারুন একটা ব্যাপার। বিকাল বেলা হাটা হাটি আর বিখ্যাত দার্জিলিং টি।









বক্স কেটে কেটে ল্যান্ডস্কেপ আর এনভায়রনমেন্ট স্টাডি। স্টাডি গুলো থেকে আমার যা মনে হল সেগুলো নোট রাখি-
১। পাহাড়ি এলাকায় ল্যান্ডস্কেপ্ট বা এনভায়রনমেন্ট স্টাডিতে দূরত্ব বোঝা সহজ। সমতলে আমরা সাধারনত সব কিছু দেখি ওয়ান পয়েন্ট পার্সপেক্টিভে। সেখানে ফোরগ্রাউন্ডের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড এত ওভারল্যাপড থাকে যে আলাদা করে তাদের স্কেল টা বুঝা যায় না। উপর থেকে দেখলে পার্সপেক্টিভের আরো রুলগুলা যেমন দূরে গেলে আস্তে আস্তে স্কেল ছোট হওয়া, ভ্যালু কমে যাওয়া এগুলো বুঝা যায়।
২। দার্জিলিং এ আকতে যেয়ে যেটা দেখলাম ওয়ান পয়েন্ট পার্সপেক্টিভ এর জায়গা নেই বললেই চলে। একটু পর পর পাহাড়ি রাস্তা গুলো বাঁক নেয়, নিচের দিকে নেমে যায়-উচু নিচু হয়ে ইউ টার্ন নেয়-সব মিলিয়ে এত রকম ডিস্টরশন আসে যেগুলা স্কেচে মজার দেখায়।
৩। কুয়াশা ঘেরা এলাকায় ভ্যালু ডিফারেন্স দারুন ভাবে দুরত্ব বুঝায়। দার্জিলিং এ যে কদিন ছিলাম আকাশ সব সময় সাদাটে। আর একটু দুরের জিনিস ই একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে ডিস্যাচুরেটেড।
৪। এনভায়রন মেন্ট কম্পোজিশানে ফোরগ্রাউন্ডে কিছু রাখা খুব জরুরি। এটা কম্পোজিশান ফ্রেম করতে যেমন কাজে দেয়, তেমনি ঐ ফোরগ্রাউন্ড কে রেফারেন্স ধরে বাকি জিনিস গুলোকে দূরে কাছে বুঝাতে সাহায্য করে। এই লার্নিং টা এখন ঢাকাতেও স্কেচবুকিং এ কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি।
  

দার্জিলিং ভ্রমন এখানেই শেষ। বেশ ভাল লাগল ঘুরে এখানে। ট্যুরিস্টের চোখ দিয়ে দেখে সব হাসি খুশি লাগলেও লাইফ এখানে নিশ্চয় অনেক কষ্টের। সারা বছর হিম হিম শীত, ৪০ কিলো পাহাড়ি পথে প্রতিদিন উঠা নামা, রিফিউজি সেন্টারে আটকে পড়া মানুষ জন, ১২ মাস ট্যুরিজমের ভিড়, পাহাড়ের নানা রকম জটিলতা-ইত্যাদির মধ্যেও মানুষ জনের হাসি মাখা ব্যবহার ভাল লাগল।





শেষে আবার কোলকাতায় ব্যাক। কোলকাতা ঘুরতে গেলে খালি অঞ্জন দত্ত এর গুলো মনে পড়ে যায়-ধর্মতলার মোড়, ৩৬ চৌরংগী লেন, রডন স্ট্রিটের কালি ঝুলি মাখা বাড়ি। এমন কিছু গান যদি আমাদের থাকত। ( আছে কয় একটা অবশ্য-টিকাটুলি বাড্ডায় অলিগলি আড্ডায়)

ইন্ডিয়া ভ্রমন-পর্ব ১

ইন্ডিয়া ট্যুরের প্ল্যান প্রোগ্রামের শুরু মেহেদি ভাই এর নারায়ন দেবনাথ কমিক এওয়ার্ড প্রাপ্তি নিয়ে। ডিসেম্বরে এওয়ার্ড আনতে মেহেদি ভাই মিতু আপু যাচ্ছেন কোলকাতা। যা থাকে কপালে ভেবে ভিসার জন্য অ্যাাপ্লাই করে ফেললাম। সাথে যোগ দিলেন হাজ্জাজ ভাই। বিশাল প্ল্যান প্রোগ্রাম রেডি হয়ে গেল-১০ দিনের ট্যুর। কোলকাতায় অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে এ্যাটেন্ড করে বের হয়ে পড়ব আমরা দিল্লির উদ্দেশ্যে। সেখানে ঘুরা ঘুরি করে যাওয়া হবে আগ্রা, তারপর সেখান থেকে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর দেখে আবার কোলকাতা হয়ে ঢাকা।

ঘুরা ঘুরি ছিল দারুন-ইন্ডিয়ার ট্রেন জার্নি, রাস্তা ঘাটে ঘুরে ঘুরে যাচ্ছেতাই খাওয়া দাওয়া, হোস্টেলে একদল বিদেশী এর সাথে থার্টি ফার্স্ট, তাজমহলের বিশালতা, জয়পুরের দূর্গে হাওয়া খাওয়া-আরো কত শত যে কাহিনী! সেসব কাহিনী এখানে না লিখে স্কেচবুক আর নতুন কেনা ক্যামেরা নিয়ে করা একটা এক্সপেরিমেন্ট এখানে আপলোড করে রাখি। ইন্ডিয়ায় স্কেচবুকে টুকটাক নোট নেবার সাথে সাথে নতুন কেনা ক্যামেরা দিয়ে খুট খাট ছবিও তুলেছিলাম অনেক। সেগুলো মিলিয়ে ঝিলিয়ে কিছু ইলাস্ট্রেশান।









জিতু স্ট্রিপ

প্রথম আলো গোল্লাছুটে জিতু স্ট্রিপ প্রায় আড়াই বছর পার করে ফেলল। ২০১৪ সালের শেষের দিকে শুরু করেছিলাম-সেদিন গুনে দেখলাম প্রায় ৭০ টার মত স্ট্রিপ জমেছে। এর মাঝে একবার মেলায় জিতু আর দাদু নাদু মিলে একটা স্ট্রিপ কালেকশান ও বের হয়েছিল। স্ট্রিপ আঁকার কিছু অভিজ্ঞতা লিখতে বসলাম ব্লগে।

প্রথম দিকে স্ট্রিপ করতে নানান রকম সমস্যায় পড়তাম। যা যা গল্প মাথায় আসত সব গুলোই মনে হত এইটুকু জায়গায় ৪-৫ ফ্রেমে আঁটাব কিভাবে। কুইক ফান বা স্ট্রিপের যেধরনের আইডিয়া দেখি সেগুলো মাথায় আসত না। তার মধ্যেই জোড়াতালি দিয়ে শুরু করেছিলাম জিতুর গল্প। একদিকে গল্প নিয়ে ভাবনা-আর এক দিকে আঁকার স্টাইল কিরকম হবে সেটা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা। বছর খানেক জিতু আর দাদু নাদু অল্টারনেট শুক্রবারে করে বের হত গোল্লাছুটে। ২০১৬ এর দিকে মেহেদি ভাই আঁকা বন্ধ করেন দাদু নাদু। মাথায় হাত-প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে স্ট্রিপ আইডিয়া করা। বসে বসে হাত কামড়াই-কেলভিন হবস পড়ি-বেসিক আলির পাতা উল্টাই-প্রতিদিন এমন দারুন সব আইডিয়া নিয়ে অনর্গল এঁকে যাচ্ছেন শাহরিয়ার ভাই-আর আমি সপ্তাহান্তে একটা আঁকতে হিমশিম খাচ্ছি-হাজারো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। তার মধ্যে রিয়াদ ভাই এর মেইল-ভাই জিতু চাই!

স্ট্রিপে অনেক কিছু এক্সপেরিমেণ্ট করেছি, করছি। একটা গল্প নিয়ে কন্টিনিউ করা, বিভিন্ন নতুন ক্যারেক্টার ইন্ট্রো করা, ধারাবাহিক ভাবে গল্প টেনে নিয়ে যাওয়া, কোন অকেশান মাথায় রেখে গল্প বানানো- সব এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়নি, পুরোপুরি বিফলেও যায়নি। এখন মোটামুটি ভাবে আইডিয়া করে উঠতে পারি স্ট্রিপ এর-কিন্তু গল্প এর দিক দিয়ে তলানির দিকে পড়ে আছি।

যাই হোক-৭০ স্ট্রিপ বাদে জিতু এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। মেলায়, অনুষ্ঠানে ঢাকা কমিকের বা গোল্লাছুটের স্টলে এসে বাচ্চারা জিতুকে চিনতে পারে, জিতু এর বই এর খোঁজ করে। এটুকুই বা মন্দ কী!


জিতু ১
জিতু ৭০

বড় আমি-ছোট আমি-০৩

সিরিজের আপডেট অনেক দিন পর!