বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

আঁকার হাতে খড়ি-পর্ব ২

প্রথম পর্ব

আঁকতে শেখার ব্লগের দ্বিতীয় পর্ব-আকার হাতে খড়ি এর পর কী আসে? ক্লাস ১, ২, ৩, ৪ করে যেভাবে আমরা পড়তে পড়তে আগাই তেমন কোন সিলেবাস-গাইড লাইন কি ছবি আকার ক্ষেত্রে করা সম্ভব? নিশ্চয় সম্ভব-সারা বিশ্বে এত এত আর্ট স্কুলে কারিকুলাম করেই নিশ্চয় শেখান হচ্ছে। তবে ক্যাজুয়ালি আর্ট শেখার শুরু কিভাবে হতে পারে?একশনেবল কিছু পয়েন্ট কি নোট করা যেতে পারে আকা শেখার জন্য? 

থিওরি, গ্রামার এসব দূরে রেখে শুরুতেই বলি মাইলেজের কথা। মাইলেজ ছবি আকার জন্য খুব ইম্পরটান্ট একটা টার্ম- মাইলেজ মানে কতগুলি ছবি আপনি আকলেন-ছবি আকার কতখানি অভিজ্ঞতা জমা হল আপনার ঝুলিতে। কিছু না জেনে বুঝে একই ছবি ১০০ বার আকলেও কিন্তু আপনার প্রথম চেষ্টার থেকে ১০০ নম্বর চেষ্টার আউটপুট বেটার আসবে। 

মাইলেজ বা আকতে আকতে শেখার পাশা পাশি কিছু টাচ পয়েন্ট ধরে ধরে ও আকার প্রগ্রেস আগানো যেতে পারে। এগুলির জন্য সব থেকে ভাল খাতা কলমে আকান। ডিজিটাল সফটওয়্যার, ট্যাব, এন্ড্রয়েড, আইপ্যাড, স্টাইলাস, এপ্স-এসবে একসেস না থাকলে আকা শেখায় গোড়ায় গলদ ভেবে বসে থাকলে কাজের কাজ হবে না।  এই সহজ কথাটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। আমি আমার নিজের লাইফেও পদে পদে অনেক সময় অনেক কাজ শুরু করার কথা ভাবিও এবং অনেক টাকা পয়সা খরচ করে প্রো স্কিলের গ্যাজেট কিনে শেষ মেষ রেগুলারিটি এবং প্র্যাকটিসের অভাবে ফেলে রেখে দেই। মনে রাখবেন আপনি আধো আধো কথা বলতে শেখা এক শিশু মাত্র-আপনার গান হাই কোয়ালিটি মাইকে সাউন্ডপ্রুফ রুমে রেকর্ড করলেও তাতে আপনার গলা দিয়ে প্রফেশনাল গান বের হবে না।

যেকোন ভাষা শিক্ষার প্রসেসের ভেতরে অনেক রকম থিওরি, অনেক রকম হাইপোথিসিস আছে। ছবি আকা যেহেতু কমিউনিকেশনের ই একটা মিডিয়াম বা ভাষা-তাই এখানের চ্যালেঞ্জ গুলিকে ভাষা শিক্ষার চ্যালেঞ্জ দিয়ে অনেক সময় ব্যাখ্যা করা যায়।  ভাষা শেখার মনিটর মডেলের ইনপুট হাইপোথিসিস বলে আপনি তখন ই ইফেকটিভলি শিখবেন যখন আপনার স্কিল লেভেলের থেকে অল্প একটূ হাই লেভেলের স্কিলের চ্যালেঞ্জ ফেস করবেন। অনেক হাই স্কিলের টাস্ক আপনাকে ফ্রাসট্রেট করে দিবে যেটা আমরা বিগিনার স্টেজে আর্টস্টেশন, ইন্সটাগ্রামে খুব ফেস করি। ওয়ার্লড ক্লাস লেভেলের নিচের কোন কাজ আপনার হোমে হয়ত আসে না এবং সেই কাজগুলিকে আপনার স্কিল দিয়ে ইন্টারপ্রেট করাই দুষ্কর-এক্সিকিউশন তো দূরে থাক। শুরুতে ভিজুয়াল লাইব্রেরী তে তাই সহজ ধরনের কাজ দিয়ে বিল্ড আপ করুন-যেটা দেখলে মনে হবে বাহ-এটা তো মনে হয় একে ফেলতে পারব।

একই সাথে আকার শুরুতে কিছু বেসিক জানতেই হবে। প্রথমে ফর্ম আর শেপ এগুলি বোঝা জরুরী। তারপরে একটার সাথে আর একটা ফর্ম জোড়া লাগিয়ে হিউম্যান ফিগার। সাথে ফিগার ড্রয়িং এর জেশচার। এরপর তিনটে মিলিয়ে কিছু ক্যারেক্টার ডিজাইনিং। হিউম্যান ফিগার আকার কারন আসলে যেহেতু এটা আমাদের সবার চেনা আর এখানে অনেক রকম ফর্ম পাশাপাশি মিলে থাকে তাই এটা একটা ভাল স্টার্টিং পয়েন্ট ড্রয়িং শিখতে।   খুব ছোট ছোট ভাবে জিনিসগুলিকে ভেঙ্গে নিয়ে একটা একটা করে শেখা-আর তার পাশা পাশি এপ্লাই করা। অনেক থিওরি জেনে এপ্লাই করতে গেলে শেখা হয় কম বরং অল্প শিখে সেটা দিয়েই কাজে লাগিয়ে কিছু করা গেলে সেটা মাথায় থাকে আরো ভাল।

ড্রয়িং এর বেসিক টপিক গুলি শিখতে অনেক সময় বোরিং লাগে কারন কেউ আমরা শুধু ফর্ম আকতে পছন্দ করি না, শুধু কম্পোজিশন করতে পছন্দ করি না, শুধু গোলক নিইয়ে শেডিং করতে পছন্দ করি না। আকতে পছন্দ গাছপালা, পথঘাট, নেচারাল বিউটি। তাহলে ক্যারেক্টার ডিজাইনের প্রিন্সিপাল শিখে সেই রুল গুলিকে গাছের শেপ সিমপ্লিফাই করতে কাজে লাগান। লাইট শ্যাডো কালার থিওরি নিয়ে সেগুলি এনভায়রনমেন্ট আর্টে কাজে লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন শীখবেন অল্প-সেটাকে যত খানি সম্ভব কাজে লাগাবেন প্র্যাকটিস আর্ট ওয়ার্কে। একসাথে অনেক কিছু শিখে সেটাকে কাজে লাগান সম্ভব হয় না কখনো। ক্লাস ওয়ান এর কাউকে এস এস সি এর সিলেবাস দিয়ে দিলে সে কিন্তু পড়ে এ প্লাস পেতে পারেনা। এক্টূ একটু করে ধাপে ধাপে শিখতে শিখতে আগাতে হবে।  

 লাইভে স্কেচবুকিং, নেচার গাছপালা এবং কম্পোজিশন প্র্যাকটিস করতে পারেন। সব থেকে ভাল আসলে একটা বই বা টিউটোরিয়াল সিরিজ ফলো করে সেটাকে কম্পলিট করা। আগেই বলেছি- একেবারে শুরুতে ডিজিটাল আকান, কালারিং এই দুটোকে একেবারে মাথায় না নেয়াই ভাল। ঠেকে শিখেছি তাই বলতে পারি যে অনেক দিন ধরে টানা হ্যাচড়া কালারিং এসব করার পর আস্তে আস্তে বুঝতে পারি যে সলিড ড্রয়িং টা কতটা জরুরী। আমার কথা মেনে নেবার কোন দরকার নেই কিন্তু যদি আকতে আকতে মনে হয় যে কোথায় যেন একটা কিছু হচ্ছে না, তখন ড্রয়িং টাকে ঝালিয়ে নিবেন মনে করে। 

আর একটা খুব ইম্পরট্যান্ট ভাষা শিক্ষার মডেল হচ্ছে Acculturation-এটার মানে হচ্ছে আপনি যেই ভাষা টা শিখতে যাচ্ছেন, সেই ভাষা ভাষী দের সাথে আপনার সম্পর্ক। একবার মিউজিক শিখতে যেয়ে পড়েছিলাম সংগীত একটি গুরুমুখী বিদ্যা। ছবি আকাও আমার মনে হয় অনেক সময় এরকম। কোন আর্টিস্ট এর পাশে বসে আপনি যদি কাজ করা দেখেন এমন কিছু টিপস ট্রিক্স দেখতে পাবেন যেগুলো হয়ত কথায় লিখে বুঝান সম্ভব না কিন্তু সহজাত ভাবে কাজ করার সময় আর্টিস্টের হাতে চলে আসে।

তবে এর বিপরীতটাও সত্য-যদি আপনি সব সময় অনেক হাই স্কিলের আর্টিস্ট দের কাজ দেখেন তাহলে আপনার স্কিল লেভেলে কোন কাজ এক্সিকিউট করতে হয়ত জড়তা বোধ করবেন। তাদের সামনে আপনার নিজের কাজ গুলি মনে হবে তুচ্ছ এবং সেই ভয় থেকে আকা হবে কম। ফেসবুকের প্রো আর্টিস্ট গ্রুপে ঢুকলেন-সবার কাজ দেখে হতাশ হয়ে গেলেন-কালচারালি সেই গ্রুপে আপনি খাপ খাওয়াতে পারলেন না। এরকম হয়ে আকা ছেড়ে দেয়-অনেকেই কিন্তু আছে। খুব ভাল হয় যদি আপনি নিজের থেকে একটু হাই স্কিলের কোন আর্টিস্টের কাছ থেকে শিখতে পারেন-তাহলে আপনার প্রবলেম গুলি তার কাছে অনেক রিলেটেবল থাকবএ এবং তার কাছে আপনার কাজের এক্সেপটেন্স থাকবে বেশি।

এর সাথে আর একটা রিস্ক থেকে যায় যেটাকে বলে Pidginization-অর্থাৎ আপনার আকার গ্রোথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাইয়ার স্কিলের আর্টে এক্সেস না থাকার কারনে বা সেই চ্যালেঞ্জ না নেবার কারনে। তাই যখন বুঝতে পারবেন একটা লেভেলে কম্ফোর্টেবলি আকতে পারছেন তখন ই উচিত নতুন একটু হাই স্কিল চ্যলেঞ্জে ট্রাই করা এবং নিজের আগের লেভেলের সাথে ক্রমাগত প্রতিযোগিতা করে যাওয়া।  শেখার কোন শেষ নেই ছবির জগতে,তাই হচ্ছে না কিছু এ কথা ভাববেন না। যার আকা দেখে আপনি কপাল চাপড়াচ্ছেন, সেই আর্টিস্ট তার জায়গা থেকে আর একজনের কাজ দেখে হয়ত হাত কামড়াচ্ছে। সেলফ ক্রিটিক হওয়া জরুরী। সেলফ ক্রিটিসাইজ করার জন্য অন্য কারো আকা স্টাডি করুন, ফিল্ম স্টিল স্টাডী করুন। নিজে দেখুন রেফারেন্স কাজটার থেকে আপনার কাজটা কেন আলাদা হচ্ছে-কোথায় ভুল হচ্ছে। একটা ছবি দেখে দেখে আকেন, তারপরে ট্রেস করে আকেন, হুবুহু কালার পিক করে পেইন্টিং করেন, নিজে দেখে দেখে কালার বিল্ড আপ করেন-এই ধরনের স্টাডি প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেলেই ধীরে ধীরে বিষয়গুলি আয়ত্মে আসবে।

অনেক কিছুই মনে হয় পারি, পারি-কিন্তু কি যেন হচ্ছে না। আবার সেটার দিকে মন দিলে আর একটা দিক যেন ফসকে যাচ্ছে। এমন ভাবেই ঠেকে শিখে এগুতে হয় ছবি আকা শিখতে। এখানে দরকার আসলে ছবি আকার প্রতি ভালবাসা। আকার কাজটাকেই ভালবাসতে হয়-পেন্সিল নিয়ে দাগা দাগি, পাতার কোনায় ছোট্ট করে আকা একটা মুখ, খাতার পিছে পেনের দাগে কমিক, কাল ক্ষন খুৎ পিপাসা ভুলে একটা সাদা কাগজে আচড় কেতে যাওয়া-এই বিষয়গুলি যদি ভাল না লাগে তাহলে আকা শেখা অনেক জটীল। অসম্ভব বলছি না কারন অনেক ভাবেই ছবি তৈরী করা যায়-খাতা কলম কে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ন আর একভাবে কেউ তার আর্টিস্ট সত্ত্বা কে পূর্নতা দিতে পারেন সেই আলাপে আমি যাচ্ছি না। 

আর একটা বিষয়ে প্রায়ই আমি ভাবতাম কোন স্টাইলে আঁকব? কোন স্টাইলে শিখব? স্টাইল বিষয়টাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী একঝন আর না আমি-১০-১২ বছর আকার পরে কারো একটা স্টাইল দাঁড়ায়। ১ মাসের ছবি আকার মাথায় দাঁড়িয়ে তাই স্টাইল, আর্ট পেজ, এসব নিয়ে মাথা ঘামান অর্থহীন। ১ মাস ছবি একে রাতা রাতি ভাইরাল সাকসেস হওয়ার স্টোরি থাকতে পারে-কিন্তু যদি আপনার মনে থাকে আকার টেকনিকাল এবং ভিজুয়াল কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তা তাহলে লেগে থাকতে হবে। ভাইরাল হয়ত হতেও পারেন নাও পারেন-কিন্তু বেশ একটা লম্বা সময় রেগুলার না আকলে আর্ট স্কিল ইম্প্ররুভ করা কঠিন।

অনেক রকম কাজ দেখে হতাশ না হয়ে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য টুকু নিয়ে নিজের ভাল লাগার কাজে লাগাতে পারেন। এটা একটা খুব বড় শিক্ষা যেটা আমি নিজে এখন এসে কিছুটা রিয়ালাইজ করতে পারি। অনেক অনেক বিশাল একটা জগত আকার যেখানে আপনার ভাল লাগার জায়গাটা খুজে আপনাকে জগতে ঢোকার দরজাটা খুলতে হবে। তারপর জগতের যতটুকু ইচ্ছা ঘুরতে পারবেন কিন্তু সব দরজায় নক করে করে ফিরলে অনেক খানি সময় কেটে যাবে কিন্তু দেখা হবে না।  তাই চলতে থাকুক আকা আকি।

মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১

জুনের শেষে লকডাউনে

খুলনায় বাড়ি এসেছিলাম কিছু কাজে কদিনের জন্য। কাজ হলেও থমথমে একটা আবহাওয়া চারপাশে। পাচটার পরে দোকান হাট বন্ধ, রাস্তায় পুলিশের কড়াকড়ি, মাস্ক এটে হেটে বেড়ান-তার মধ্যে বর্ষা। তুমুল বর্ষা-দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে জল কাদায়। লকডাউন, করোনা, শিফটিং, হাজারো টেন শন মাথায় নিয়ে নিজের কাজ কিছু হয়নি। টুকটাক স্টাডি, থ্রিডি সফটওয়্যারে গুতো গুতি, আর স্ট্রেস রিলিফ পেইন্টিং। সব কিছু জড়ো করে ব্লগে দিয়ে রাখছি। অস্থির সময়ের স্বাক্ষর হয়ে থাকুক ছবিগুলো।

নিজের কমিকের কিছু ক্যারেক্টারের মধ্য দিয়ে স্টাডি এর কাজ গুলো করছি ইদানিং-এটা বেশ কাজে দেয়। নিজের প্রজেকট টারও খানিকটা প্রগ্রেস হচ্ছে আবার পেইন্টিং স্টাডি ও হচ্ছে। আর ইদানিং থ্রীডি দারুন ভাবে স্টাডি তে কাজে দিচ্ছে। থ্রিডি শেখার জন্য তো বটেই-একই সাথে এনাটমি শিখতে থ্রিডি আসলে দারুন কাজের একটা জিনিস-সব দিক ঘুরিয়ে যখন দেখা যায় তখন মাসল গুলোর আগা-আর গোড়া- এটা বুঝতে খুব হেল্প হয়। আরো করতে থাকব এই স্টাডি গুলো-চলবে। 










রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

আঁকার হাতে খড়ি-পর্ব ১

একটা খুব কমন প্রশ্ন-ভাই, আপনি কিভাবে আকেন? কিভাবে আকা শিখলেন? আমি কিভাবে আকা শিখব?

আমার মত কিভাবে আকি? আমার মত করে আকান মানে কি?আমার মত করে আকা কি শেখা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব- ডিজনি তে চাকরি পাওয়া আর্টিস্ট দের ডিজনি স্টাইল ধরে ধরে শেখান হয় যাতে সবার আকার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে। সে তো কাজের জন্য শিখে আকা। তার পেছনে অনেক পরিশ্রম আর এনালাইসিস আছে যাতে স্টাইল টাকে তার মূল পয়েন্টে ভেঙ্গে শেখান যায় সবাইকে। 

তবে আমি আমার স্টাইলকে ভেঙ্গে চুরে অমন একটা সিলেবাস ধরে শেখানোর মত করে ভাবিনি। সেটা পুরোপুরি শিক্ষামূলক প্রজেক্ট-সেকাজে সময় দেয়ার মত এক্সপার্টিজ বা নিজের জ্ঞান নিয়ে অত খানি কনফিডেন্স আমার নেই। যে নতুন আকতে শিখছে তাকে আমার স্টাইলে আকতে শেখানোর কোন চেষ্টাও আমার নেই। স্টাইলে আকতে শেখার বিষয়টাও গোলমেলে। কারন আকার মূল যে বিষয়গুলি-ফর্ম, লাইন, শেপ, জেশচার, কম্পোজিশন, কালার, শেডিং-এসব না আলাদা আলাদা করে এপ্লাই করার উপায় নেই। সব কিছুই এক সাথে একটা ছবিতে কাজে লাগে। আলাদা আলাদা করে জিনিসগুলি শেখা বিরক্তিকর, কিন্তু আলাদা না শিখে আকতে আকতে শেখাও সময়সাপেক্ষ। তাহলে আঁকা শেখার প্রথম ধাপ কি? কোনটা ছেড়ে কোনটা শিখব? এত এত কিছু শিখতে হবে-কিভাবে একটা প্রসেসে এগুলি শিখব? কোথা থেকে শুরু করব? কাকে ফলো করব?

আকতে শেখার প্রসেস টা অনেকটা আমার মনে হয় ছোটবেলায় ভাষা শেখার মত। লিখতে শেখা আর কথা বলতে শেখা-দুটো কিন্তু সম্পূর্ন আলাদা বিষয়। আমরা বাংলা যেভাবে শিখি-তা কিন্তু কথা বলতে বলতে শেখা। ছোট বাচ্চারা শুনে শূনে কথা জোড়া লাগিয়ে অনেক কথা বোঝাতে পারে। ব্যাকরন, কথ্য, চলিত, সাধু, সমাস-এত শত বিষয় তার মাথায় রাখতে হয় না। কিন্তু এগুলো না শিখলে আবার শেখা টা কিন্তু পূর্নতা পায় না। বলতে বলতে বা শুনঅতে শুনতে যে শেখা , সেটি কিন্তু লিখিত রূপের শিক্ষা দেয় না। ভাষার নান্দনিকতার শিক্ষা দেয় না। কোন বাচ্চাকে চাইলে কবিতা মূখস্ত করে বলান যাবে কিন্তু সেই কবিতার ভাব বোঝার সামর্থ্য তার তখনো হবে না। তবে বাচ্চা দের কাছে কথা বলার মূল যে লক্ষ-অর্থাৎ কমিউনিকেশন, সেটার জন্য কিন্তু এত নিয়ম কানুন ডিঙ্গিয়ে কথা শুনা আর বলতে চেষ্টা করার কাজটাই মূখ্য। দুটি পাশা পাশি শিখতে শিখতেই ভাষার দক্ষতা অর্জন সম্ভব। আমরা অনেক সময় ইংরেজি যেভাবে শিখি-তাতে খাতা কলমে নিয়ম নীতি মেনে পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি-কিন্তু বলতে গেলে জড়োসড়ো হয়ে যাই। সাবলীল ভাবে বলার দক্ষতা অর্জন এর জন্য ইংরেজি শুনা বা আধো আধো বলতে চেষ্টা করার যে প্র্যাকটিস টা সেখানে একটা ফাক থেকে যাওয়ায় এই জড়তা টা কাটে না।  এখানে বলতে বলতে শেখা, শিখতে শিখতে এপ্লাই করা-এমন অনেক প্রসেসের একটা মিথস্ক্রিয়া এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। 

এখন এই প্রসেস টার সাথে চিন্তা করেন ছবি আকা শেখার প্রসেসটা। প্রচুর বিগিনার আর্টিস্ট, তারা ক্রমাগত জানতে চাচ্ছেন কিভাবে আকলেন, কোন সফটওয়ারে আকলেন, কোন ট্যাবে আকলেন, কতক্ষন ধরে আকলেন, কোন ব্রাশ ব্যবহার করলেন-ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। টেকনিকাল এসব নানা প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার অবশ্যই-তবে এ উত্তর গুলি জানা ছবি আকা শেখার পথের অনেক অনেক দূরের ধাপ। ধরুন আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে চান, ফ্রেঞ্চ একজন রাইটার কোন কলমে লিখছেন সেই প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন থাকতে পারে-কিন্তু সেই ব্রাণ্ডের কলম কিনলে তা দিয়ে ফ্রেঞ্চ লেখা বের হবে এই চিন্তা হাস্যকর। ছবি যারা আকছেন, বিগিনার স্টেজে আছেন, প্রথমে এই বিষয়টা মেনে নেওয়া জরুরী। আপনার হাতের কাছে ইউটিউব, আর্টস্টেশন, ছবির ব্যাকরন নখদর্পনে, ড্রয়িং ট্যাব আর পিসির স্পেক ঠোটের ডগায়, ফোনের স্ক্রিনে ড্রয়িং এর এপ -এত অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিজেকে বিগিনার ভাবাটা কঠিন। কিন্তু এটাই শুরুর ধাপ। নিজেকে কল্পনা করুন ভাষা শিখতে বসেছেন- সব কিছু দূরে সরিয়ে জরুরী ঐ আধো আধো কথা বলে কিছু বুঝাতে শেখা। হ্যা, আপনি যদি একটা কবিতা মুখসত করে স্কুলের ফাংশনে বলেন, লোকে হাততালি দিবে, বাহবা দিবে, বাচ্চাদের যেমন উতসাহ দেয়। কিন্তু সেই বাচ্চাকে এজেন্সি অফিসে কপিরাইটিং এ বসিয়ে বলুন-দারুন কবিতা পার তুমি-লিখে ফেল ঝট পট তাহলে দু তিনটে-কাজ হবে?

মিমিক্রি না-বিষয়গুলিকে আত্মস্থ করার একটা প্রক্রিয়া এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় সবাইকে। একটা সত্য ঘটনা বলি। মোটীভেশনাল গল্প বলা যেতে পারে-তবে গল্পের স্থান, কাল, পাত্র-কিছুই খেয়াল নেই। এক ঘোড়া নাকি অংক করতে শিখেছে। সাধারন অংক-এক অংকের সংখ্যার যোগ বিয়োগ ধরনের। তাজ্জব ব্যাপার। সাজানো বলা যায় না কারন ঘোড়ার মালিক সজ্জন ব্যাক্তি-সত্যিই তার বিশ্বাস তার ঘোড়া অংক করতে পারে। কিভাবে করে অংক? একটা হোয়াইট বোর্ডে লেখা হয় দুটো সংখ্যার মাঝে যোগ চিহ্ন দিয়ে-তারপর ঘোড়া যোগফলের সমান সংখ্যক বার খুর ঠুকে। ঘোড়ার মালিকের কোন কারসাজি নেই-অনেকেই নিজেদের মত করে প্রশ্ন লিখে দিয়েছে-ঘোড়া ঠিক ঠিক খুর ঠুকে সঠিক উত্তর দেয়। পরে যখন এই দাবী নিয়ে পরীক্ষা চালান হল সবাই অবাক। ঘোড়ার মালিক আসলেও নির্দোষ। তার ঘোড়া অংক না পারলেও মানুষের এক্সপ্রেশন পড়তে ছিল তুখোড় দক্ষ। ঘটনাটা ঘটেছিল এমন যে, প্রশ্ন টা লিখে সামনে একজন দাঁড়িয়ে থাকত ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে। ঘোড়া বুঝে ফেলেছিল এমন ভাবে তাকালে তাকে খুর ঠুকতে হবে। সঠিক সংখ্যক বার খুর ঠুকার আগ পর্যন্ত প্রশ্নকর্তার চোখে একরকম প্রশ্নের এক্সপ্রেশন থাকত-ঘোড়া যদি যোগফলের সমান খুর ঠুকত তখন এক্সপ্রেশন পালটে একটা অবাক বা বিস্ময়ের এক্সপ্রেশন চলে আসত। এ সময় ঘোড়া বুঝেছিল খুর ঠোকা থামিয়ে দিতে হবে। এভাবে উত্তর ঠিক দিত বটে ঘোড়া কিন্তু যোগফলের নিয়ম কানুন সব ডিংগিয়ে। পাবলিক রিএকশন এনালাইজ করে অনেক বাহবা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেই ঘোড়াকে দিয়ে দোকানে হিসাবের কাজ চলবে না।

তাহলে কিভাবে শিখব? 

সবার আগে ভাবুন ছবি আকা শিখতে আপনার উদ্যেশ্য কি আসলে? পেজ খুলে ফেমাস হওয়া নাকি নিজের মত আকতে শেখা , বোরডম কাটান,  প্রফেশনালি স্টূডিও জব করা, এনিমেট করে গল্প বলা, নিজের মত ক্যারেক্টার আকতে শেখা, নাকি ফ্রিল্যান্স কাজ করার জন্য ছবি আকা শেখা। এই অবজেকটিভ মাথায় থাকাটা খুব জরূরী। তাহলে সেই ভাবে নিজের রিসার্চ, বা স্টাডি এলিমেন্ট গুলিকে সিরিয়ালি সাজিয়ে নিতে পারবেন। হয়ত আপনার ইচ্ছা খুব সিমপ্লি কমিক স্ট্রীপ আকান। আপনি আর্ট স্টেশনের রিয়ালিস্টিক গেম ক্যারেক্টার দেখে স্টাডি করতে থাকছেন। আপনি শখের বশে জলরং এ ফুল ফল আকতে চান-আপনাকে কঠিন কম্পোজিশন আর কালার থিওরী এর বই গুলে খাওয়ান নিস্ফল। এজন্য যেটাতে মজা পান সেটা দিয়েই স্টাডি চালান জরুরী। 

তারপর? খুব সহজ- এতই সহজ যে সেটা চিন্তা করাটা কঠিন।

শেখার প্রথম ধাপ আকতে শুরু করুন। যেমন পারেন, যতটুকু পারেন। বাচ্চারা আধো আধো বোলের জন্য বাহবা পায়-বড়োরা আধো আধো বোলের জন্য পায় সমবেদনা। কিন্তু এতে দমে যেয়েন না। আপনার আকা শুরুতে কিছুই হবে না, তুখোড় আর টি এক্স গ্রাফিক্স কার্ড লাগান পিসিতেই হোক, আর পাচ টাকা কলমে বিশ টাকার খাতাতেই হোক-হাতে খড়ি পর্যায়ে এই স্ট্রাগল টাই মূল-শুরু করা। বলতে যত সহজ-করতে তত সহজ নয়। নিজের কাছে কাজটাকে এনজয় করতে শিখুন-কালিতে, তুলিতে, জল রঙ পেন্সিলে প্রতিদিন কিছু না কিছু আকুন। ৩০ দিনে একটা খাতা ভরাট করতে পারেন কিনা চ্যালেঞ্জ টা নিয়েই দেখুন না। কোন একটা কাজকে অভ্যাসে পরিনত করটা কঠিন-কিন্তু করতে পারলে তার ফল সুদূর প্রসারী। তাই আকাস কুসুম কল্পনা র রাশ টেনে ধরে, আর হচ্ছেনা হবেনা পারবনা লোকে হাসবে, আমার টা কেন অমন হচ্ছে না, এসব চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রেখে একবার খাতা কলম নিয়ে বসেন। আকুন যা ইচ্ছে যেমন ভাবে ইচ্ছে। চিন্তা করুন আপনি কথা বলতে শিখছেন-কেউ আশা করেনা আপনি কালকেই সাবলীল ভাষন দিবেন মানুষের সামনে-তবে একদিন সেই মঞ্চে দাড়াতে চাইলে আপনাকে প্রথম স্টেপ টা নিতেই হবে। 

তাই চলতে থাকুক আকা আকি।

দ্বিতীয় পর্বঃ https://artsbyrats.blogspot.com/2021/06/blog-post_24.html


বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

জুন শেষ

 দেখতে দেখতে জুন শেষ হয়ে এল। নতুন একটা বছর দেখতে দেখতে পুরনো হয়ে এল। এক ঘেয়ে জীবনে সময় দ্রুত যায়। শেষ হয়ে এল। আর কটা দিন।

নানা ঝক্কি ঝামেলা পূর্ন দিন শুরু হতে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উতরাই এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে-তাও ভাল-যদি সময়ের গতিটাকে একটু ধীর করে দেয়া যায়?












মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১

খ্যাপ কাজ

 অনলাইন ফ্রিল্যান্সে করা বেশ কিছু কাজের ভলিউম জমে গেছে। ব্লগে দিয়ে রাখলাম কটা সেখান থেকে।