বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১

আমাদের শেষ নিঃশ্বাস কবে ছিল?

 আমাদের শেষ নিঃশ্বাস কবে ছিল?

শেষ কবে প্রান খুলে শ্বাস নিয়েছি?

মহামারীর দিন গুলি কেটে যাচ্ছে একটার পর একটা, সিনেমায় মেশিন গান থেকে যেভাবে গুলির খোসা একটার পর একটা ছন্দে পড়তে থাকে সেভাবে। বৈচিত্র ছাড়া একটানা।

কিন্তু তার আরো অনেক অনেক আগেই, আমরা কি শেষ নিঃশ্বাস টা নেইনি?

দায়িত্ব, জীবন বাস্তবতা, সংসার, চাকরি- এসব কিছু কি আসলে মুখোশ? আমাদের ভেতর টা কী আরো আগেই মারা যায়নি?

কাজ কর্ম চাকরি বাসা বাড়ি-এসবের আড়ালে থেকে আমরা ভাবি জীবনটা কেটে গেল এই করতে করতে-কত কি না করতে পারতাম এসব না থাকলে। কিন্তু আমরা স্বীকার করিনা যে এগুলি না থাকলেও আসলে আমাদের কিছু করার নেই আসলে। আমরা রোমান্টিসাইজ করতে পারি যে অনেক কিছু করতে পারতাম হয়ত অবসর পেলে, কিন্তু অবসরে কিছু করার মন আমাদের আর হয়ত নেই।

নতুন গান শুনে এখন আর অবসর ক্যাটাতে পারি? একটা নতুন গান নিজের পুরনো ৯০, ২০০০ দশকের প্লে লিস্টে জায়গা করে নিতে পারে? কোন সিরিজে শুনা একটা গানের লিরিক লিখে ইন্টারনেটের তস্য গলি ঘুপচি ঘেটে ইন্ডি, পপ, রক গান বের করার ইচ্ছা টা তো মরে গেছে।

অবসর পেলে এখন আর ইচ্ছা করে না নতুন গেমটা খেলি। একটু অবসরে ঝির ঝিরে মনিটরে কনভার্টার কেবল লাগিয়ে গেম খেলার ইচ্ছে গুলো মরে গেছে-মৃত জম্বি লাশকে টেনে আনার মত গেম বানাবার চেয়ে এখনকার অবসর কাটানো মনকে আকর্ষন করা সহজ। তাই গেম গুলিও সেই আগের ট্রোপেই ঘুরপাক খায়-ঝা চকচকে গ্রাফিক্সে এখন খেলতে পারলেও জীবনের সেরা গেম বলে মনে হয় ১৪ ইঞ্চি সি আর টি মনিটরে স্কুল ফাকি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলে শেষ করা এক অখ্যাত গেম।

এখন আর ভাবা যায়-অবসরে এক পাল ছেলে পেলে মিলে একই রকম ড্রেস পরে, ঝুম বৃষ্টী কাদায় কাক ভেজা হয়ে নিশ্চিন্তে হাটতে হাটতে বাড়ি ফেরা? মোবাইল ভেজার ভয় নেই, মানিব্যাগের কার্ড হারাবার ভয় নেই, জুতো কাদা মাটিতে নষ্ট হবার ভয় নেই, চুল ভিজে ঠাণ্ডা লাগার ভয় নেই, ছাতা রেইনকোটের বালাই নেই-এখন আর ভাবা যায়? সব দায়িত্বের মুখোশ টেনে ফেললেও তো ইচ্ছে গুলো জাগে না আর।

তাই আমরা ডুব দেই কাজের আড়ালে। ব্যাস্ততা, ম্যাচিউরিটি, কাজ, গাম্ভীর্য এর আড়ালে লুকোই। নিজেকেও হয়ত বোঝাই সময় নেই বলে হচ্ছে না কিছু। কিন্তু আয়নার সামনে দাড়ালে বুঝেই যাই, ঐ পুরনো ছেলেটা মরে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন