শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২

বছরের হাবি জাবি

 













এ বছর শুরু থেকে দেখলাম এতদিনে মাত্র একটা ব্লগ পোস্ট। যদিও ব্লগ কেউ পড়ে না, ফলো করেনা, নিজের ডায়রি হিসেবেই বছরের আকা ছবি গুলো আর লার্নিং পোস্ট করে রাখি।


এখন পেইন্টিং, বা ক্যারেক্টার ড্রয়িং এর এপ্রোচ অনেক বদলে গেছে। লুজ পেন্সিল স্টাইলে লাইন আর্ট, রাফ কালারে লাইট শ্যাডো ব্লক করে আস্তে ধীরে রেন্ডারিং এ যাওয়া, অনেক রকম এক্সপেরিমেন্ট করে টরে কম্ফোর্টেবল প্রসেসের জায়গা খোজা চলছে এখনো। তবে মূটা মুটি একটা ধাঁচে প্রসেস সেট করতে পারছি এখন। সাটল অনেক ফর্ম দেখি এখন, অনেক জায়গায় জানার ঘাটতি বুঝি, আবার এও বুঝি সব শেখা এক জীবনে সম্ভব না। অন্যের চোখে নিজের কাজ দেখতে পাওয়ার জায়গায় এখনো অনেক ঘাটতি-টেকনিকের পাশাপাশি মনটাকেও ঝালিয়ে নেয়া প্রয়োজন। চলছে চলবে আকাআকি-শেষ মেষ সৃষ্টিতেই তো আনন্দ।

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ফেব্রুয়ারি ২২

ফেব্রুয়ারির দুপুর ৩টা।

ঝাঁ ঝাঁ রোদের গরম।মাঝ ফেব্রুয়ারিতেই শীত পালিয়েছে। রিকশাটা এসে থামে টি এস সি র মোড়ে। বিকাশের দোতলা বই এর সমান গেটের পাশে পুলিশ ব্যারিকেড টা পার হতেই দু একজন হাতে রঙ তুলি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাবার আয়োজন করে। বাংলা একাডেমির রাস্তা টা বরাবর অনেক দূর দেখা যায় মানুষের সারি। মুচ মুচে প্যাটিস এর ঘ্রান টা নাকে আসে-মেলার গেট ঐ যে সামনে।

এপার বাংলা না ওপার বাংলা-সোহরাওয়ার্দি আর বাংলা একাডেমির মাঝের রোড ডিভাইডার টায় দাঁড়িয়ে কতক্ষন এদিক সেদিক তাকাই। আজ কি স্কেচ এর দলের কেউ আসবে? বস কি মেলায় নাকি আজকে আসবেন না? পরিচিত কাউকে ডাকব নাকি এক দফা ঘুরে আসব আগে?

বই মেলাই তো-মিলে যাবে কেউ না কেউ। সিকিউরিটি ঢোকার আগেই ব্যাগটার চেন আধ খোলা করে রাখি-পুলিশ বুঝে যায় মেলা বার এপার ওপার করা পাবলিক-হাত নেড়ে ছেড়ে দেয়।

প্রতিবার মেলায় ঢুকে দোকান পাট চিনতে সপ্তাহ খানেক কেটে যায়। ডান দিক বরাবর হাটতে থাকি-মেলাটা এবার কতদূর গেল? স্বাধীনতা স্তম্ভের ওপারেও চলে গেছে? ফুচকা আর খাবার এর দোকান এর জায়গা বাড়িয়ে দিল নাকি এবার? বড় বড়ো প্যাভিলিয়ন গুলো তো সব এক জায়গাতেই মনে হয়। কথাপ্রকাশ, পাঞ্জেরি, অন্যপ্রকাশ, আগামী, সময়, কাকলী, বাতিঘর ( চট্টগ্রাম ), প্রথমা-আরো অনেক গুলি বড় প্যাভিলিয়নে ঢু মেরে দেখে নেই। এখানে কেনা হবে-তবে আর একটু দেখে শুনে। যাওয়ার পথে নাম পড়তে পড়তে যাওয়া-পিছে টাঙ্গানো ব্যানারে নতুন বই এর নাম আর লেখকের ছবি ঝুলছে-বেশ এবার মাঝের সারিগুলিতে যাওয়া যাক।

কয় একটা দোকান থাকবে যেখানে সেলিব্রেটি লেখকের আনা গোনা-সামনে অটোগ্রাফ নিতে তুমুল ভিড়। কোন কোন দোকান মুখ চেনা কোন লেখকের বই বের করে ভক্তকূল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। রোদের তেজে একটু ছায়ার জন্য দোকানের সামনে টাঙ্গানো চাদর এর নিচে দিয়ে হেটে যেতে যেতে বই এর নাম দেখা হবে-হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখা হবে-কোন কভারে চোখ আটকে গেলে উলটে দেখে নিব কে আকল ছবিটা-ওহ এ যে আমাদের চেনা আরাফাত।

দুপুরের মেলায় হুট করে দেখা হয়ে যাবে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরায় ইকবাল ভাই। পালাই পালাই করেও হঠাৎ চোখে পড়ে যাব আর ক্যামেরার সামনে দু লাইন কথা বলতে হবে। আবার কথা হবে এই আশ্বাস দিয়ে দৌড়ে পালাব বই এর জটলার ভেতর।

এক চক্কর কেটে ফিরতি পথে দু একটা চেনা দোকানে আবার বই দেখা দেখি। হঠাৎ করে চোখে পড়ে যাবে নাম না জানা কোন প্রকাশনীর টেবিলে উপর থেকে দু নম্বর সারিতে ধ্রুব এষ এর না পড়া একটা থ্রিলার, খুজতে থাকা কোন বই এর দারুন কোন অনুবাদ, হরর বা ফ্যান্টাসি ধাঁচের ছোট গল্পের কোন একটা কালেকশন-কিংবা নতুন আসা কোন কমিক। বিকাশে পেমেন্ট করে ১০% লাভ আর এক প্যাকেট বই বগলদাবা করে হাটা চলবে। এর মধ্যে হয়ত জুটে গেছে সাথে দু চারজন পরিচিত কেউ- মেলার ধুলোর আধিক্য আর বেঞ্চের স্বল্পতার আলাপ করতে করতে মাহাতাব এর ফোন। মেলাতেই তো-আস। কিছু বই এর নাম দাও-চাইনিজ সাইফাই? রাশিয়ান নভেলা? ফ্যান্টাসি ট্রিলজি? যা পাই তাই খাই-বই মেলার সময় এত বাছলে চলে না।

ঘুরতে ঘুরতে বাতিঘরের সামনে এসে পড়ব। বই দেখার সময় নেই-উপচে পড়া ভিড়। সিদ্দিক ভাই এর বই আসল নাকি নতুন? প্যাকেট প্যাকেট-বিকাশ হবে না-কোনঠাসা ভিড়ে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিয়ে কোনমতে বের হয়ে এসে দেখব সাথে মাহাতাব হাওয়া। বাতিঘরের আড্ডায় তাকে রেখে সামনে হাটতেই দেখব বস এসেছেন মেলায়। বস এর সাথে নিশ্চিত ভাবে থাকবেন কোন প্রকাশক-হালকা কথা বলে তারপর বসের পিছে হাটতে হাটতে আমরা চলে যাব আশ পাশের দোকানে। শিশু চত্ত্বরে এসে পড়লাম নাকি?

চিলড্রেন বুক দেখা চলবে-কে আকল কোথায়? কেমন আকল? নতুন বই এর প্রোডাকশন কেমন? তীর্থ ভাই কি আকল মেলার গেটে? নাহ, লোকটারে থামাতে হবে-এসব আক্ষেপ শেষে ঢাকা কমিক্স। মেহেদি ভাই ক্যাশে-গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে জোড়াতালি দিয়ে বসে পড়ি। সেল কেমন-দোকানের পজিশন কেমন-নতুন বই কি আসল দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ভাই ব্যাগটা রেখে যাই দোকানে? চলেন ঘুরে আসি।

ঘুরে আসার নাম করে মেহেদি ভাই কে নিয়ে মূলত যাওয়া হবে কোনার খাবার দোকানে। কফি-প্যাটিস-ফুচকা-চলবে একটা কিছু। ফিরতি পথে মেহেদি ভাই এর সাথে এক দফা মেলা ঘুরা ঘুরি-ততক্ষনে দলে ভারি হয়েছি আমরা। লেকের ধারের দোকান গুলির পাশ ধরে হেটে ফিরছি শিশু চত্তরের দিকে। কানে আসছে ঘোষনা চলছে মাইকে-আজ মেলায় প্রকাশিত হয়েছে অমুক-পাওয়া যাচ্ছে তমুক প্রকাশনির স্টলে। ভাই উন্মাদের দিকে যাবেন নাকি? নটা বাজতে কত দেরী? পৌনে নটার পর কিন্তু এদিকে আর আসা যাবে না-হিসেব কষে যাওয়া হবে ওপার বাংলায়। উন্মাদ স্টলে নতুন আর এক আড্ডা-বিপনু ভাই, পাবাল, তানজিম এবং আনকোরা নতুন আরো কিছু মুখ। দেখা মিলতে পারে রোমেন ভাই এর সাথে-তাহলে পাশের বাংলা একাডেমি ক্যান্টিনে আর এক দফা ফ্রি নাস্তা। খেয়ে দেয়ে জলদি ফিরতে হবে-স্টলের হিসেব, বন্ধের সময়।

মেলার শেষ প্রহর চলছে। বাতি নিভে গেছে-স্টলের পর্দা পড়ে গেছে। পকেটে হাত ভরে চেনা গল্প গুলি করতে করতে ফিরছি মেলার গেটের দিকে। পাশে পুলিশ ফাড়ি-তথ্য কেন্দ্র-সারি সারি ল্যাম্পোস্টের শাদা আলো। ব্যাগে ভর্তি বই। হাটছি আমি, সামনে মেহেদি ভাই কমিক নিয়ে কিছু বোঝাচ্ছেন আর কাউকে। রোড ডিভাইডারের ওপারে বস। হেঁটে হেঁটে টি এস সির গেট। সেখান থেকে একদল যাবে শাহবাগ-বস ফিরবেন গাড়িতে মিরপুর-আর আমি টি এস সি-আজিমপুর রিকশা না পেয়ে একলা হাটা দেব ঢাকা ভার্সিটির ভেতর দিয়ে। কালকে আবার একই সময়, একই জায়গা, একই রুটিনে।

আমাকে কেউ নিয়ে যাবে মেলায়?

সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

শাদা রঙ

 অনেক দিন বাদে ব্লগ খুললাম। ডায়রি হিসেবে কিছু দিন পর পর লেখা উচিত কিছু না কিছু। সময় কাটানোর থেকে সময় ধরে রাখার জন্যই লিখতে বসা। সময় কেটেই যায়-একা ঘরে বসে হিটার ছেড়ে নেটফ্লিক্সে, ফটোশপে, পেন ট্যাবে, স্কেচ খাতায়, মোবাইলে, ছোট থেকে ছোট তর ভিডিওতে উড়ে যায় ঘন্টা তিন। ঘন্টা তিনেকের ছবি দেখতে ক্লান্তি আসে কিন্তু ১৫ সেকেন্ডের বিন্দু বিন্দু শিশিরকনার মত করে সময়ক্ষেপন করা খুব সহজ। সে আলাপ আরেকদিনের-আজকে লিখতে বসার কারন হল রং।

সাদা-নাকি শাদা-বরফশাদা রঙ এর সাথে প্রথম পরিচয় হল আজকে আমার। কখনো বরফ দেখিনি-দেখিনি রাতে দেখা পাতা ঝরা গাছগুলির সকালে শাদা রঙ এর সাজ, দেখিনি কালকেও সবুজ থাকা মাঠে জমে ওঠা শাদার ভেতর কুকুরের পায়ের ছাপ, কোন দিন দেখিনি আকাশের শাদা রঙ মিশে গেছে বাড়ির চালে জমে থাকা শাদায়। তুলোর মত বরফ কথাটা পড়েছিলাম-আজ সেই কথাটা ধরে দেখলাম। হাফপ্যান্ট পরে কি তুষার দেখা যায়? খালি মাথায় একটা হুডি গায়ে চাপিয়ে স্যান্ডেল পায়ে দিয়েও তুষার দেখা যায়? নাকি ঐ পাট পাট করা জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে নিজের সিলুয়েট টাকে বিশালাকায় করে না তুললে তুষারে হাটা যায় না? এসব প্রশ্ন আর মাথায় আসবে না।

সব কিছু শাদা হয়ে যাক। রঙ এর ক্যানভাস মুছে যাক-একটা লাল জ্যাকেট ফুটে থাকুক শাদার ভেতরে। চারিপাশের নিত্যদিনের মনোটনি ভেঙ্গে যাক গুড়ি গুড়ি হোয়াইট নয়েজে। গাছের ডালে পাতার বদলে ফুটুক শাদা রঙ এর রিম লাইট। আর কাক গুলি উড়ে বেড়াক, বলে বেড়াক সবাইকে উইন্টার ইজ কামিং।

যাই ভাট না বকে ক্লাসের এসাইনমেন্ট শেষ করি।

রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্কুল জীবন

স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম আবার এই ত্রিশ দশকে। অনেকদিন বাদে আবার ক্লাস, হোমওয়ার্ক, এসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, ক্লাস লেকচারের খাতা, কলম। পড়া শুনার এই ধরনটা অবশ্য আগের থেকে একদম আলাদা-হাতে কলমেই মুল পড়ালেখার কাজ চলছে। ক্যাম্পাসে ক্লাসে ল্যাবে সফটওয়্যারের হাতেখড়ি পর্যায়েই আছি এখনো। নতুন করে এই ক্লাস শুরু করে নতুন  কিছু উপলব্ধি আসল নিজের মধ্যে। যেমন সব দেশে সব ক্লাসেই কিছু ছেলে পেলে থাকে ব্যাকবেঞ্চার, কিছু ফ্রন্ট লাইনার, কিছু ন্যাচারাল লিডারশিপ, কিছু ডেডিকেটেড হার্ড ওয়ার্কার। কয়েকজন আছে সব কাজ সবার আগে শেষ করে ফেলব, কিছু থাকবেই জমার আগের দিন করতে বসে কাজ তুলে ফেলছে। কারো লক্ষ্য নিজের ভিশনে পৌছতে যা দরকার তা করে ফেলি, কেউ চায় ডেডিকেশন নিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করে নিখূত কাজ। কলেজ ক্যাম্পাসের আড্ডা লেখা পড়া নিয়েই, তার বাইরের আলাপ বুঝতে পারা আমার জন্য এক চ্যালেঞ্জ। সদ্য স্কুল পাশ ভিনদেশি কালচারের বিশ দশকের সাথে ক্লাস লেখাপড়ার সাবসেট টুকুই আলোচনার সম্বল। তবু সব মিলিয়ে নিজের পড়া শুনার কাজটা টুক টাক গুছিয়ে নিচ্ছি।

হাউসমেট দের সাথে হ্যালো গুডমর্নিং, বাড়িতে ফোন দিয়ে দুপুর বেলায় গুডনাইট, সন্ধ্যা বিকালে মাঠে দৌড়নো বা জিমে ঘাম ঝরানো, বাসে করে সপ্তাহের বাজার নিয়ে ফেরা-এই মিলিয়ে দিন  কাটছে। পরীক্ষামূলক রান্না করি, নিজের কাছে নিজেকে টেনে টুনে পাশ করাই। ঠান্ডার দিন গুলোতে ইচ্ছে হয় একটু আলসেমি করি, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি, ধোয়া ওঠা খিচুড়ি খাই। তখন ই মনে পড়ে এসাইনমেন্ট জমার দিন কালকে, সকাল নাগাদ বৃষ্টি পড়তে পারে- তার আগেই বাজার টা ঘরে তোলা দরকার, লন্ড্রী বাস্কেটে কাপড়ের পাহাড়, ফ্রিজের টাপারওয়্যারের বক্স ঠন ঠন। তাই টেনে তুলে নিজেকে পড়ার টেবিলে বসাই। মায়া সফটওয়ারের বোতাম চাপি, রান্না চড়াই, আর কানে গুজে রাখি হেডফোন।

আজকে একদম ভাবনা চিন্তা ছাড়া এলোমেলো লেখা। ভিডিও বানাবার প্ল্যান করছি কিন্তু করে ওঠা হচ্ছে না। কত কী করার ছিল যে-অঞ্জন বলে গেছেন ঠিক ই।

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সন্ধ্যা

 সন্ধ্যার সাথে দিন চক্রের একটা অদৃশ্য কানেকশন আছে। সন্ধ্যা মানেই পাখিদের ঘরে ফেরা, আকাশ লাল করে সূর্য ডোবা, সন্ধ্যা মানেই ছোটদের খেলার সময় শেষ, মসজিদে আজানের স্বর। সন্ধ্যা মানে ছিল অফিস শেষ করে হাটতে হাঁটতে বের হওয়া, রাস্তায় নুডলস, চিকেন এর দোকান এর পাশ দিয়ে যাবার সময় খুচরো খাওয়া দাওয়া, সন্ধ্যা মানে ছিল মোগলাই, জিলাপি, পুরিতে ধোঁয়া ওঠা কামড়।

কিংবা সন্ধ্যা মানে বাসের লাইনের ভিড়ে আমি দাঁড়িয়ে, কানে হেডফোনে রেডিওতে বাজতে থাকা শো, বাস না পেলে অচেনা বাইকারের পিছে সিট আকড়ে বসে থাকা, বায়ে প্লাস্টিক, ডানে এম্বুলেন্সের হিসেব কষে ফুটপাথ দিয়ে বাইক উঠিয়ে সময় বাচানো, ফ্লাইওভারে উঠে রাতের শহরের কাপা কাপা রাস্তা, মার্কেটের দোতলার চায়ের দোকান।

সন্ধ্যা ছিল পড়তে বসা, সন্ধ্যা ছিল কোচিং ছুটি, সন্ধ্যা ছিল চাদরাতে ঘুরতে বের হওয়া, সন্ধ্যা ছিল স্বাধীনতার প্রথম সিঁড়ি। সন্ধ্যা ছিল লেকের পাড়ে আড্ডা, স্কেচবুকে টুকিটাকি, মার্কেটে হাটা হাটী, শেষতক কফিশপে এক্সট্রা চিনির স্যাশেতে। সন্ধ্যা নিশ্চুপে প্রতিদিন এসে জানান দিয়ে গেছে একটা দিনের শেষ।

এখানে কি সন্ধ্যা হয়? ১৫ ঘন্টার দিনে কটকটে দিনের আলোতে অফিস ছুটির ঘন্টা বাজে, বিকেল পড়লে কফিশপে তালা ঝুলে, আলো পড়ে এলে শপিং মল বন্ধ। ঘড়ির সাথে দিনের আলো আর মিলাতে পারি না। বিকেলে না আমি হাঁটতে যাব? সন্ধ্যা হলে না পড়তে বসব? ফুটবল মাঠে দৌড়চ্ছি কিন্তু সন্ধ্যা হচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাস কেটে যাচ্ছে কানের দুপাশ দিয়ে কিন্তু সূর্য ডুবছে না। আকাশ লাল হয়ে আসছে, ঘন্টার কাটা ঘুরছে-৭ টা, ৮ টা বেজে গেল-সন্ধ্যা হবে না? ফিরব না ঘরে?

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কী নাই

প্রবাস জীবনে এখনো হানিমুন ফেজ চলছে-এদিক সেদিক যাই, খাই দাই, ঘুরি ফিরি। ব্যস্ততা, দৈনন্দিন হিসাব নিকেশ, মাসের শেষে বিলের ধাক্কা, কাজ কর্ম কিছুই শুরু হয়নি এখনো। রঙ্গিন চশমা এটে তাই আশ পাশ দেখি, কিন্তু কি যেন নেই। রাস্তা পার হবার আগে বেল টিপে কানে হেডফোন গুজে নিশ্চিন্তে  চলে যাওয়া যায়-ডানে বামে তাকিয়ে পার হওয়ার সেই শিক্ষা অকেজো এখন। বাস স্ট্যান্ডে দাড়াও-গুগল বলে দিবে কোথায় আছে বাস, ফোনে নম্বর টিপে জেনে নিতে পার পরের বাস আসতে কত সময় লাগবে। "ভাই অমুক জায়গায় যেতে কোন দিকে যাব" -এই প্রশ্নে অচেনা কারো হাত নেড়ে মোড়ে যাবার আশ্বাসে হাটবার সময় ফুরিয়েছে। দেখতে দেখতে ট্রেন চলে আসে, স্কাই ট্রেন, মেট্রো রেল, এক্সপো লাইন, কানাডা লাইন। টিক টিক করে সময় বলে দিচ্ছে ২ মিনিটের মাথায় এসে যাবে ট্রেন-ঘড়ির কাটা ধরে ঠিক ঠিক নামিয়ে দেবে স্টেশনে। টুক টুক করে কার্ড ঘষটে নেমে ম্যাপ দেখে দেখে চলে যাও রাস্তা ধরে।

শহর থাকবে অনেক গোছান, উচু নিচু রাস্তার পাশ ধরে হেটে গেলে দূর দূরান্ত আকাশ দেখা যাবে। ঢাকায় মনে পড়ে সাগুফতা দিয়ে হেটে সামনে গেলে অনেক খানি আকাশ দেখা যেত। প্রতিবার দেখার সময় একটা আশ মিটিয়ে দেখে নেবার সাধ ছিল কারন আশংকা কদিন বাদেই হয়ত আকাশটাকে গিলে খাবে গা ঘেঁষে উঠে যাওয়া আবাসিক বিল্ডিং আর ফ্লাইওভারের পিলার। এখন আকাশ দেখি-দূরের শহর দেখি-তারো পিছে পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ দেখি। দেখতে দেখতে পাখিরা উড়ে যায়-নটার সময় সন্ধ্যা নামে। একা রাস্তায় হেটে হেটে ফিরি। এই মনে হয় ছিনতাই হয়ে গেলাম নাকি এই বুঝি সামনে কেউ এসে ঠ্যাক দিল, ভাবতে ভাবতে দেখি পাশ দিয়ে নিশ্চিন্তে সাইকেল চালিয়ে গাছের সারি পেরিয়ে যাচ্ছে এক ভিনদেশি মেয়ে। বাতাস আছে, গাছপালা আছে, পাখির ডাক আছে, সারাজীবন পিসি তে গেম খেলার সময় দেখে আসা কোম্পানির লোগো সহ অফিস আছে, কিন্তু কী যেন নেই।

বুটিক শপের আশ পাশ দিয়ে ঘুরি, দেয়ালে আকা গ্রাফিটী দেখি, স্কোয়ামিশ মানুষের ইতিহাস ঘাটি গুগলে। সাদা,কালো, ধুসর বা এক রঙ্গা ফ্যাশনে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে হুট হাট চোখে পড়ে দু একজন আল গোছে নকশী কাটা ব্যাগ ঝুলিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে। ঘুরতে এসে আইসক্রীম না খেলে কেমন হয়, ৭০ এর নামতা পড়ে খানিক হিসেব কষি-তারপর কি হবে এত ভেবে বলে চামচে কেটে নেই ব্ল্যাকফরেস্ট ব্লাস্ট এর স্কুপ। একই রকমই-৯০ দশকের বিদেশ দেখা আর ২১ এর গ্লোবাল যুগে এসে বিদেশের স্বাদ দেশের মতই লাগে। পাখি গুলো পায়ের উপর দিয়ে হেটে যায়-মানুষকে ভয় পাবার কোডটা ওদের জিনে এখনো লেখা হয়নি। চি চিই শব্দ করতে করতে থপ থপ করে হেটে বেড়ায় আশ পাশ দিয়ে-চুপ করে বেঞ্চের পাশে বসে শুনে নানান দেশের গল্প। বসে পড়ি প্রাইড ফ্ল্যাগ উড়তে থাকা একটা ইয়ট এর পিছে-এর মধ্যে লাইভ গান ভেসে আসে। স্কট জেকব নামের ইন্সটাগ্রাম গায়ক কালো টিশার্ট আর জিনসের শর্টস পরে স্যান্ডেল পায়ে গেয়ে যাচ্ছে অনলি নো ইউ লাভ হার হোয়েন ইউ লেট হার গো। 

নীল পানির মৃদু মন্দ স্রোত, বিকেলের পড়ে আসা রোদে ঢিলে সোয়েটার পরে সান কিসড ছবি, বাজারের পলিথিন ব্যাগে পেয়াজ, ব্যাগের ভেতরে পড়ে থাকা স্কেচবুক, গিটারের সামনে ১০ ডলারের সিডির বাক্স, দৌড়ে পার হয়ে যাওয়া রোলার স্কেট, বাচ্চাদের ছুটোছুটী-সবই  হোয়াইট নয়েজে মিলিয়ে যায়। যেন মুভির একটা সেটে বসে থাকা এক্সট্রা আমি-ছক বেধে হিসেব কষে চলছে সব পাশ দিয়ে। স্ক্রিপ্ট বেঁধে ডিরেকটর, সিনেমাটোগ্রাফার, আর্ট ডিরেকটর পরের শট টা বলে দিচ্ছেন। পারফেকশনের মধ্য দিয়ে কাঠের তক্তায় জুতার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে রেলিং এ ঝুকে তাকাই নিচে। পানিতে রিফ্লেকশন বলে দেয় হাতে তাকিয়ে দেখ-ধোয়া ওঠা সর ভাসা দুধ চার কাপটা নেই।